| বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যার মূল ঘাতক পিন্টু দেবনাথ ও তার সহযোগি বাপনকে আবারো ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। ২১ মাস আগে কাপর ব্যবসায়ী স্বপন অপহরণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। বুধবার (১৮ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে শুনানী শেষে আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রিমান্ডের শেষ দিনে বাপেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিতে প্রবীর হত্যাসহ ২১ মাস আগে অপহৃত স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের কথাও বেরিয়ে আসে। স্বপনকেও পিন্টু তার নিজ বাড়িতে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এর আগে শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের খাস কামড়ায় প্রবীর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পিন্টু দেবনাথের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেখানে সে প্রবীর ঘোষকে একা হত্যা করে ৭ টুকরা করার ঘটনা স্বীকার করেন। এরপর আরো তদন্তের জন্য পিন্টুর কর্মচারী ও প্রবীর হত্যাকান্ডে তার অন্যতম সহযোগী বাপেন ভৌমিককে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
স্বপন কুমার সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ কাচারীগলি এলাকার মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে। মামলার এজাহারে বাদী নিহতের বড় ভাইঅজিত কুমার সাহা জানান, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন খুচরো কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তখন তদন্তে বেরিয়ে আসে যে কাশীপুর উত্তর গোয়ালবন্দ এলাকার সেলিনা আক্তার নামের এক নারীকে স্বপন গোপনে বিয়ে কেরেছেন। ওই সময়ে আবার স্বপনকে না পেয়ে ওই বছরের ১১ নভেম্বর সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি জিডি করেন। পরে স্বপনের বন্ধুরা কালীরবাজার এলাকার পিন্টু দেবনাথকেও জিজ্ঞেস করি। কিন্তু পিন্টু বার বার বলে আসছিলেন স্বপন ভারত চলে গেছে। গত ৯ জুলাই প্রবীর ঘোষের লাশ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ বাড়ে। পরে ১৫ জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগি বাপন ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। সে তখন পিন্টু দেবনাথের এক বান্ধবী রত্মা রাণী চক্রবর্তীর সন্ধান দেন। বিডি তার মোবাইল নাম্বার পর্যালোচনা করে জানতে পারে স্বপনের মোবাইলটি রত্মা ব্যবহার করছে। ১৫ জুলাই রাতে তাকে আটকের পর তার কাছ থেকে স্বপনের ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল উদ্ধার করে। মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্লাট বাসা ক্রয় করে। ওই ফ্লাট বাসা পিন্টুকে না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছিল স্বপন। তখন স্বপন ফ্লাটটি নিজের নামেই করে নেয়। এসব কারণেই ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিত। তখন থেকেই স্বপন সাহা ও প্রবীর ঘোষকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে পিন্টু। পরে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর স্বপনকে বাসায় ডেকে নেয় পিন্টু। পরে তার ফ্লাটে সে রাতে চাপাতি দিয়ে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মৃতদেহ খন্ড খন্ড করে ব্যাগে ভরে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। রত্মার দেওয়া তথ্য মতে রোববার রাতেই গ্রেফতার করা হয় মামুনকে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন রাতে নিখোজ হন কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। নিখোঁজের ২১ দিন পর ৯ জুলাই রাত ১১টায় ঘাতক পিন্টুর দেয়া তথ্য মতে শহরের আমলাপাড়া এলাকার পিন্টু যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই ৪ তলা ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীরের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে প্রায় দেড় বছর আগে নিখোঁজ কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহার নিখোঁজের আসল রহস্য। স্বপন নিখোঁজ না বরং ব্যবসায়ীক দ্বন্দের জের ধরেই ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে পিন্টু দেবনাথের বাসায় বসে স্বপনকে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মাসদাইর এলাকার রত্না রানী চক্রবর্তী ও শহরের আমলাপাড়া এলাকার আবদুল্লাহ আল মোল্লা মামুনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
Posted ১৩:২১ | বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain