
| মঙ্গলবার, ০২ মে ২০১৭ | প্রিন্ট
ইদানীং অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পথ ধরে এবার ইউরোপেও দেখা যাবে উগ্র ডানপন্থিদের উত্থান। কথাটা সর্বতোভাবে সঠিক নয়, কারণ সাম্প্রদায়িকতা বিশ্বে নতুন কোনো বিষয় নয়। ইউরোপে উগ্র ডানপন্থিদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে এবং খুব গোপনে হলেও তা বেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতেই এগিয়েছে এতদিন। তবে অতি সম্প্রতি সাম্প্রদায়িকতা কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদের মতো ইস্যুগুলো যেন জেঁকে বসেছে। মৌলবাদী বা চরম ডানপন্থিরা আবার জেগে উঠছে, আগামী পৃথিবীর জন্য এটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ বিপর্যয় বা পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহারের উদ্বেগের চেয়েও বড় উদ্বেগ এটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ কিংবা ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্তের পর কম জল ঘোলা হয়নি। ব্রেক্সিট সমর্থন করে ভোট দিয়ে আবার ‘ব্রেক্সিট কি’ জানতে সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি ঘুরেছে ব্রিটিশরাই। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের গোঁড়া প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে হতবাক হয়েছে গোটা বিশ^। চলতি বছর ইউরোপের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের নির্বাচন। তর্কাতীতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের পর সবচেয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা অনুষ্ঠিত হবে। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি ইউরোপের তিনটি দেশে এ বছরের নির্বাচন বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। কোন দল বা প্রার্থীর জয় হলো সেটা বড় বিষয় নয়, বরং চরম দক্ষিণপন্থি, ‘পপুলিস্ট’ শিবির কতটা জনসমর্থন আদায় করতে পারে সেদিকেই সবার নজর। যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট গণভোট আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পর ইউরোপ এক সাদাসিধা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে : লোক দেখানো চরিত্র ও জাতীয়তাবাদীরা কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল দেশগুলোতেও একই প্রভাব বিস্তার করতে পারবে? ব্রেক্সিট ও ট্রাম্পের নির্বাচনের পর নেদারল্যান্ডসের ভোটাররা ভিল্ডার্সের জয় থামাতে পেরেছেন। তবে ফ্রান্স ও জার্মানির ভবিষ্যৎ কোন পথে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কায়দায় জোরালো দেশপ্রেমের বুলি আউড়ে নেদারল্যান্ডসকে ‘মহান’ বানানোর স্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন চরম ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা গিয়ার্ট ভিল্ডার্স। কট্টরপন্থি রাজনৈতিক অবস্থান, মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ এবং ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থানের কারণে তাকে ‘নেদারল্যান্ডসের ট্রাম্প’ বলেন অনেকে। যদিও এত কিছুর পরেও ভিল্ডার্সের থেকে মুখ ফিরিয়ে ডাচরা রক্ষণশীল মার্ক রুটকেই তাদের নেতা হিসেবে বেছে নেয়।
এরপর এলো ফ্রান্সের নির্বাচন। প্রথম দফা ভোট শেষে ফলাফল আটকে আছে রানঅফে। নির্বাচনের প্রথম পর্বে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীকে দ্বিতীয় পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নেদারল্যান্ডসের মতো ফ্রান্সের নির্বাচনেরও স্পষ্ট ট্রাম্পের ছায়া। দ্বিতীয় পর্বে উদার মধ্যপন্থি প্রার্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রোর মুখোমুখি হবেন ফরাসী ট্রাম্প খ্যাত কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফএন) ম্যারিন লো পেন। দলের নেতৃত্ব থেকে আপাতত সরে আসলেও তিনি যে ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন না, এটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ট্রাম্পের সদৃশ ম্যারিন লো পেনের কণ্ঠে শোনা গেছে ট্রাম্পের বাণী। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও বাইরের পৃথিবী থেকে দেশের মানুষের চাকরি ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন তিনি। ইইউয়ের সঙ্গে থাকতে নারাজ এবং নিজস্ব ফরাসি মুদ্রা চালুর উপর জোর দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনি অঙ্গীকার হিসেবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু বৃহত্তর জার্মানির সংস্থায় পরিণত হবে। যদিও ব্যাংক অব ফ্রান্স সতর্ক করে দিয়েছে, এই ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ফ্রান্সের জাতীয় ঋণ বার্ষিক ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হারে বেড়ে যাবে। লো পেন এমন আকাক্সক্ষাও পোষণ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক উপাদান, যেমন ইউরোপীয় নাগরিকদের অবাধ চলাচল বন্ধ করে দিতে চান। এখন অপেক্ষা সপ্তাহ দুয়েকের। এরপরই জানা যাবে ফ্রান্সের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে।
বছরের শেষার্ধে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জার্মানির নির্বাচন। টানা তিনবার চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়া অ্যাঞ্জেলা মের্কেল শরণার্থী নিয়ে বেশ বিপাকেই রয়েছেন। এছাড়া একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় নাস্তানাবুদ জার্মানিতে মনোযোগ কাড়ছেন ৪১ বছর বয়স্ক ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যবসায়ী ফ্রাউক পেট্রি। তার ভয়াবহ উক্তি, ‘বেআইনিভাবে যে অভিবাসী জার্মানিতে ঢুকবে পুলিশকে তাকে গুলি করার অধিকার দিতে হবে।’ মুসলিমদের ওপর বেজায় ক্ষ্যাপা পেট্রির মেনিফেস্টোতে রয়েছে, ‘ইসলাম ইজ নট আ পার্ট অব জার্মানি’ অর্থাৎ ইসলাম জার্মানির অংশ নয়।
ইউরোপের বড় কয়েকটি দেশে অতি ডানপন্থিরা ক্ষমতায় এলেও তারা শিগগিরই আবিষ্কার করবে, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। যেমনটি ট্রাম্প এখন টের পাচ্ছেন। ট্রাম্প, ব্রেক্সিটবাদীদের এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তারা সিংহভাগ মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে পারেন। বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে যোগ্যতা ও সফলতার সঙ্গে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারবেন, সেই প্রমাণও তাদের দিতে হবে।
Posted ০৬:২৫ | মঙ্গলবার, ০২ মে ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain