
| মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। এরপরই মুফতি হান্নান তার নেতৃত্বাধীন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদকে নতুন করে সংগঠিত করার জোর উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি কারাগার থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায় সে ছকও কষতে থাকেন। পাশাপাশি কারাগার থেকে একটি জিহাদি অডিওবার্তা পাঠান বাইরের সহযোগীদের কাছে।
তার এই জিহাদি ডাকের অডিও আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারের নির্দেশও দেন মুফতি হান্নান। কিন্তু তাকে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনতাই করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই এ তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখা (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগের কাছে চলে আসে; ধরা পড়ে যায় মুফতি হান্নানকে ছিনতাই পরিকল্পনায় জড়িত তিন জঙ্গি।
সূত্র বলেছে, গত কয়েক মাস ধরেই গোপনে সংগঠিত হয়ে আসছে মুফতি হান্নানের নেতৃত্বাধীন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। এজন্য কয়েকটি জেলায় সহযোগীদের বিশেষ দায়িত্বও দেন মুফতি হান্নান। পুলিশের বিশেষ শাখার দেওয়া তথ্যে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে এ ব্যাপারে তথ্য পায় পুলিশ।
কিন্তু মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী বিপুলকে যে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার পথে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনতাই করার ছক কষা হয়েছে, এ তথ্য গত মাসের শুরুর দিকে জানতে পারে পুলিশ। এর পরই নড়েচড়ে বসে তারা। শুরু হয় গোপন অনুসন্ধান।
পরে পুলিশের বিশেষ শাখা ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সদস্যরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শাহজাহানপুর এলাকা থেকে তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া তিন জঙ্গি হলো- আবু বক্কর সিদ্দিক মাহমুদ ওরফে আল হাদি (২২), জাভেদ হোসাইন (১৯) ও সালেহ আহমদ (৪৯)। তাদের কাছ থেকে জানা যায় মুফতি হান্নান ও বিপুলকে ছিনতাইয়ের পুরো ছক সম্পর্কে। এর পরই পুলিশের হাতে আসে মুফতি হান্নানের অডিওবার্তা, যা কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে বাইরে পাঠানো হয়েছে। মুফতি হান্নান এই অডিওবার্তা আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারের জন্য সহযোগীদের নির্দেশনাও দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অডিও পুলিশের হাতে চলে আসে। তবে আলজাজিরা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেছে কিনা এ ব্যাপারে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ তদন্ত করে দেখছে।
সূত্র বলছে, শীর্ষ দুই জঙ্গিকে ছিনতাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাশিমপুর কারাগার এলাকা ছাড়াও কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং সিলেট জেলা কারাগার রেকি করে জঙ্গিরা। এই তথ্য পাওয়ার পর মুফতি হান্নান ও সহযোগী বিপুলকে বহনকারী প্রিজনভ্যানে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রিজনভ্যানের সামনে পেছনে থাকছে পুলিশের বিশেষ এসকর্ট।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই হরকাতুল জিহাদ অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। গত কয়েক মাস ধরে এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে সংগঠিত করা হচ্ছে। এজন্য কারাগারে বসেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মুফতি হান্নান অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সেই অর্থ ইতোমধ্যে কারাগারের বাইরে থাকা তার সহযোগীদের হাতে চলে গেছে। কিন্তু কী পরিমাণ অর্থ গেছে তা জানা যায়নি।
মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলা, কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ সারা দেশে ১৩টি বড় ধরনের জঙ্গি হামলায় জড়িত। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ১০১ জন। আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। প্রতিটি হামলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মুফতি হান্নান।
সময়ের কণ্ঠস্বর
Posted ০৯:৫৪ | মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain