
| রবিবার, ০৫ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
আহমাদ আলী: ক্ষোভে প্রতিরোধে উত্তাল ৫ মার্চ, ১৯৭১। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সকাল-দুপুর হরতালের পর দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমাসহ সব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অসহযোগ আন্দোলনের কারণে সারা পূর্ব বাংলায় জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক প্রশাসন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে এবং দেশ পরিচালিত হতে থাকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এবং তার পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ একের পর এক নির্দেশিকা জারি করা শুরু করেন।
হরতালের মধ্যেও যাতে যার যার প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পেতে কষ্ট না হয় সে কথা বিবেচনায় রেখেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ মার্চ থেকে হরতালের পর দু’তিন ঘণ্টা দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ও সমর্থন বিস্তৃত করেন। জরুরি সার্ভিস হিসেবে হরতালের আওতামুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয় হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তারের গাড়ি, সংবাদপত্র ও তাদের গাড়ি, পানি, বিদ্যুৎ, দমকল, টেলিফোন, মেথর ও আবর্জনা ফেলার ট্রাক ইত্যাদি।
১ মার্চ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতা ও অসহযোগ আন্দোলনে সারা দেশে যে অসংখ্য বাঙালি ও ছাত্র-জনতা শাহাদত বরণ করেছেন-তাদের স্মরণে আজকের এই দিনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। দিনটি ছিল শুক্রবার-তাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের শেষে লাখো মুসুল্লি শহীদদের আত্মার মাগফেরত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে।
আজকের এই দিনে তোপখানা রোডে লেখক সংঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতার দাবিতে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার অভিমুখে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ও কালো পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। ঢাকা শহর ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, যশোরসহ প্রতিটি জেলায় জেলায়ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদিন সকাল-দুপুর হরতালের পর অফিস-আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। ঢাকাসহ সারা পূর্ব বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার নতুন পতাকা তুলতে থাকে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ততায়।
বাঙালীর চোখে তখন শুধুই স্বাধীনতার স্বপ্ন। দেশজুড়ে মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ। আগুনঝরা মার্চের তারিখ এগুনোর সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের গতি তীব্র হচ্ছিল। চারদিকে স্বাধীকার আন্দোলন জোরদার করার কাজ চলছে। অসহযোগের মাধ্যমে আন্দোলন এগিয়ে যায় স্বাধীনতার অবশ্যম্ভাবী ও যৌক্তিক পরিণতির দিকে।
পাশাপাশি মৃত্যুর সংবাদ আসছে প্রতিদিন। কিন্তু ঘাতকের বুলেট মৃত্যুর মিছিল বাড়িয়ে দিলেও রুখতে পারেনি মুক্তিকামী বাঙালীর উত্তাল আন্দোলন।
বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এবং স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পর নড়েচড়ে বসে পিন্ডির শাসকগোষ্ঠী। মুক্তিকামী বাঙালি পথে নেমেছে। ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’-স্লোগানে প্রকম্পিত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার রাজপথ। অন্যদিকে লারকানায় ভুট্টোর প্রাসাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো ডুয়েল ষড়যন্ত্রে ২০ হাজার বাঙালীর লাশ হলেই আন্দোলন থেমে যাবে-ভুট্টোর এই অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে নেমে পড়ে পাকি হানাদার বাহিনী। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ।
একাত্তরের ৫ মার্চ চট্টগ্রামে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেন ২২২ বীর বাঙালি। তাদের রক্তে ভেসে যায় বীর চট্টলার রাজপথ। টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে হতাহত হয় ১৮ জন। যশোরেও নিহত হন মুক্তিকামী এক বাঙালি যুবক। এমন গণহত্যার সংবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, মিছিল-প্রতিবাদ সভায় কেঁপে ওঠে অত্যাচারী শাসকের ভিত। এ দিনে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে ৩২৫ কয়েদি মিছিল করে শহীদ মিনারে চলে আসে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয়। অবশ্য কারাগারের ফটক ভাঙ্গার সময় প্রহরীর গুলিতে সাত কয়েদিকে প্রাণ হারাতে হয়।
Posted ০৬:১২ | রবিবার, ০৫ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain