
| বুধবার, ১১ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
ব্রেক্সিট নামে পরিচিতি পাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সে দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এ কথা জানিয়েছেন লন্ডনের ব্রেন্ট বারা শহরের মেয়র পারভেজ আহমেদ।
বুধবার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠকে এই কথা বলেন লন্ডনের এই জনপ্রতিনিধি।
গত বছরের জুনে ব্রিটেনে গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয় বেশিরভাগ ভোটার। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে ২০২০ সাল লেগে যাবে। অর্থনীতিবিদরা আগে থেকেই সতর্ক করছিলেন ব্রেক্সিটের ফলে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বে গোটা ইউরোপ। অন্যান্য অঞ্চলেও এর প্রভাব দৃশ্যমান হবে।
তবে লন্ডনের ব্রেন্ট বারা শহরের মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পারভেজ আহমেদ বলছেন, ‘বেক্সিটের ফলে লন্ডনে বাংলাদেশিদের অনেক কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ লন্ডনে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে কারি শিল্পে বাংলাদেশিদের চাহিদা ব্যাপক। এই খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই খাতে প্রচুর দক্ষ লোক দরকার। ইউরোপের লোকেরা কারি শিল্প সম্পর্কে জানে না। একে আরও বিকশিত করা যায়।‘
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘অভিবাসীদের কারণে ব্রেক্সিট হয়েছে- এই কথা ঠিক নয়। এটা মিডিয়া প্রোপাগান্ডা। অনেকগুলো কারণে বেক্সিট হয়েছে। কিন্তু মিডিয়া শুধু অভিবাসীদের বিষয়টিকে হাইলাইট করেছে।’
প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দুই দেশ সম্মিলিতভাবে কাজ করবে বলেও জানান মেয়র পারভেজ আহেমদ।
বৈঠকে উপস্থিত সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন শেকিল আহমেদ বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশিদের কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। কীভাবে দক্ষ জনশক্তি সেখানে পাঠনো যায় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন মেয়র পারভেজ।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মেয়র পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ-ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে বড় অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ব্যবসা খাতে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
ব্রিটিনে মেয়র হিসেবে নিজের কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আমি লন্ডনে লোকাল গভর্নমেন্টে কাজ করি। জনগণের সেবা করি। বাংলাদেশেও একইভাবে কাজ হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর দেখা যায় কিছু ছোট ছোট সমস্যা আছে। ব্যবসায় বিনিয়োগে এসব ছোট সমস্যা হলেও কখনো কখনো ছোট সমস্যাই বড় আকার ধারণ করে। এসব বিভাকে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কী কী সমস্যার মুখে তারা পড়ছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি লন্ডনের মেয়র।
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের পরিবর্তনেরও তাগিদ দেন ব্রেন্ট বারা শহরের মেয়র। তিনি বলেন, নতুন নাগরিকত্ব আইনের ফলে বাংলাদেশি প্রবাসীরা সম্পত্তির মালিকানা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবে।
‘স্বর্ণ প্রবাসীদের’ পাশে থাকবে সরকার
প্রবাসীদের ‘স্বর্ণ প্রবাসী’ আখ্যায়িত করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রবাসীরা। প্রবাসীদের সব সমস্যা সমাধানের আমরা অত্যন্ত আন্তরিক। প্রবাসীদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে যেমন করণীয় আছে। তেমনি প্রবাসীরা বাংলাদেশে আসলে যেন শান্তিপূর্ণভাবে বিচরণ করতে পারে, কোনো ধরনের সমস্যার মুখে না পড়ে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার দায়িত্ব আছে সরকারেরও।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নে ব্রিটেনের অবদান আছে। দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছে। সেখানে লোকাল গভর্নমেন্টে এবং পার্লামেন্টেও আমাদের নাগরিকরা আছে। তারা দুই দেশেরেই নাগরিক। তাদের সমস্যা আমাদের দেখতে হবে। সেই দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমরাও নিতে পারি। সেই সমস্ত বিষয়গুলো সিরিজ আকারে আমরা বিটিবিতে প্রচার করে আমাদের জনগণকে জানাতে পারি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশের তিনটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের খুঁটি রয়েছে। একটি পোশাক খাত, একটি হচ্ছে কৃষি ও কৃষক, অপরটি প্রবাসী খাত। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণেই প্রবাসীদের পাশে থাকবে সরকার।’
এক কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ ছাড়াই তারা বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন।
Posted ১০:৩৯ | বুধবার, ১১ জানুয়ারি ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain