
নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট
ধর্ম ডেস্ক :জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে নামাজের পরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাকাতকে। মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তারা এমন লোক- যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ করে ও মন্দকাজে বাধা প্রদান করে।’ (সুরা হজ: ৪১)
জাকাতের খাত (জাকাত যাদের দেওয়া জরুরি)
জাকাত দিতে হয় নির্ধারিত খাতে। অন্যথায় জাকাত আদায় হয় না, কবুলও হয় না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নির্ধারিত ৮টি খাত হলো- ১. ফকির ২. মিসকিন ৩. আমেল তথা জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি ৪. (নওমুসলিমের) মন জয় করার জন্য ৫. দাসমুক্তি তথা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ লোক। ৬. ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধে জাকাত দেওয়া যাবে ৭. ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে এবং ৮. মুসাফির। (সুরা তাওবা: ৬০)
৮ খাত থেকে বর্তমানে ৩ খাত অব্যবহৃত
এই আট খাত থেকেও ৩টি খাতে বর্তমানে জাকাত দেওয়ার সুযোগ নেই। সেগুলো হলো- ১. আমেল তথা জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি। ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগারের জন্য শরিয়ত নির্দিষ্ট জাকাত উসুলকারী আমেল। এটা ইসলামি রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৬/৬৯) ২. নওমুসলিমদের ইসলামের প্রতি মহব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক জাকাত প্রদান। এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোনো ধনী নওমুসলিমকে জাকাত প্রদান জায়েজ নয়। (হেদায়া: ১/১৮৪, মারেফুল কোরআন: ৪/১৭১, তাফসিরে মাজহারি: ৪/২৩৫) ৩. দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই, তাই এ খাতটিও বাকি নেই।
যাদের জাকাত দেওয়া উত্তম
আত্মীয়স্বজন যদি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় (অর্থাৎ উল্লেখিত খাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়), তাহলে তাদেরকে জাকাত দেওয়া উত্তম। যেমন- আপন ভাইবোন, ভাগনে–ভাগনি, ভাতিজা–ভাতিজি, চাচা–জেঠা–ফুফু, মামা–খালা; চাচাতো–জেঠাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো–খালাতো ভাইবোন এবং অন্য নিকটাত্মীয় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন, তাহলে তাদেরকে জাকাত, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাহ, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত দেওয়া যাবে; বরং তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ হাদিস শরিফে আছে নিকটাত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়—প্রথমত, দানের সওয়াব; দ্বিতীয়ত, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব। (সুনানে নাসায়ি: ২৫৮২)
আত্মীয়দের মধ্যে যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না
তবে মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি—এভাবে ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। একইভাবে ছেলে-মেয়ে ও তাদের অধস্থন কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। স্বামী স্ত্রীও একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না। দাদা-দাদি, নানা-নানি স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানাদি এরা দরিদ্র হলে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে জাকাত দেওয়া না গেলেও এমনি সহায়তা করা কর্তব্য। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া: ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার: ৩/২৯৪, ২৯৫)
‘জাকাতের টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।’ (হেদায়া: ১/২০৬, বাদায়ে: ২/৪৯)
জাকাতের অর্থ ব্যক্তিমালিকানায় দিলেই জাকাত আদায় হয়। মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও হাসপাতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ খরচ করা যাবে না। কারণ এসব ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ ব্যয় ব্যক্তিবিশেষকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হয় না। (তাতারখানিয়া: ৩/১৯৮, ২০৮; দুররুল মুখতার: ৩/১৭১-১৭৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Posted ০৮:৪৭ | শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain