নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট
জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সব জঞ্জাল ও আবর্জনা দূর করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গীয় সংস্কৃতি পরিষদ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর উদযাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় আজ তার কন্যা শেখ হাসিনা সংকট মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন।
বঙ্গবন্ধু সবসময় জনগণের ওপর নির্ভর করতেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে তিনি কারাগারে থেকে ভূমিকা রেখেছিলেন। ৫৪’র নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যদিয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করার এক বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন সরকারে থেকে খুব বেশি কাজ করা যাবে না। এরপর ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা ঘোষণা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এবং ৭০ সালের নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাওয়ার পর জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া স্বাধীনতার স্বীকৃতি নাও হতে পারে। পরে তার নেতৃত্বে ৯ মাস লড়াই-সংগ্রাম করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
হানিফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের একেবারে নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবন শেষ করে কলকাতায় গিয়ে কলেজে পড়াশোনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে মানুষের অধিকারের ব্যাপারে, সহায়তা করার প্রচণ্ড মানসিকতা ছিল। ছাত্রজীবন থেকে দেশের প্রতি তার দায়িত্ব ছিল। ৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তখন থেকেই তিনি প্রতিবাদ করেন। বিশেষত উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার কথা বলার মধ্যদিয়ে এবং চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, মানসিকতায় বোঝা গিয়েছিল এ রাষ্ট্র বাঙালির জন্য নয়। সেসময় ৫৬ ভাগ বাঙালি, ১৩ ভাগ মানুষ উর্দু ভাষাভাষী এবং ১৭ ভাগ মানুষ পশতু ভাষায় কথা বলতেন। সেসময়ে অর্থনীতি থেকে শুরু করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সব ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান বৈষম্য করেছিল। বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদকপ্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে তুলে দেন বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশ চন্দ্র। সেই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘হি ইজ ম্যান অব পিস, ম্যান অব ইনডিপেনডেন্ট। নাউ হি ইজ দ্য বিশ্ববন্ধু।’ বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।
এর আগে ১৯৫৬ সালে স্টকহোমে বিশ্বশান্তি পরিষদের সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাই আমার জীবনের মূলনীতি। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যতটুকু প্রয়োজন আমার ভূমিকা থাকবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য আমরা বাংলার মহামানবকে ধরে রাখতে পারিনি। যে বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিতের পক্ষে ছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তার নিজ বাসগৃহে দেশের মানুষের হাতে মারা যান। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তার পদচারণা ছিল না। সবকিছুতে তিনি বিচরণ করেছেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তিনি তার লেখায় জীবনের কথা, মানুষের কথা, প্রেম-বিরহের কথা বলেছেন। বাংলা সাহিত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো এমন প্রতীভা দ্বিতীয় আর পাবে বলে মনে হয় না।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে হানিফ বলেন, তিনি শোষিতের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। প্রতিবাদী লেখনি দিয়ে তিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাদের অনুপ্রেরণা আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা বাঙালি জাতির ‘মুকুট মণি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ। মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভামুখ্য ছিলেন রবীন্দ্র একাডেমির সভাপতি কবি আজিজুর রহমান আজিজ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমিন সভাপতি সেলিনা হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান ও ভারতের বঙ্গীয় গুজরাট সমন্বয়ক শ্রী অনিরুদ্ধ দত্ত।
Posted ১৭:০৪ | বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain