পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতে হাড় ভেঙে যেতে পারে। সাধারণত আমরা ব্যথা পেলে স্থির থাকি না। অন্যজন গিয়েই টানাটানি শুরু করি; হাড় জোড়া লাগাতে চাই। এটি কিন্তু খুবই মারাত্মক ভুল। হাড় ভেঙে গিয়ে যতটা ক্ষতি হয়, এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় এই টানাটানিতে। কারণ, ভাঙা হাড় নড়াচড়া করলে ভাঙা অংশ আশপাশের মাংসপেশী, রক্তনালীকে ছিড়ে ফেলতে পারে। এতে হাড় ভাঙ্গা পরবর্তী অংশ রক্তশূন্যতার কারণে পঁচেও যেতে পারে।
পেরিওস্টিয়াম (হাড়ের বাইরের স্তর) আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়াকে ফ্র্যাকচার বলে। খুব সাধারণ ভাষায় হাড় ফেটে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়াই ফ্র্যাকচার হিসেবে পরিচিত।
ফ্রাকচারের কারণঃ-
১. সরাসরি আঘাত: কোনো স্থানে আঘাতের কারণে হাড় ভেঙ্গে যায়, যেমন হাড়ের ওপর সরাসরি আঘাত, বুলেট ইনজুরি ইত্যাদি।
২. পরোক্ষ আঘাত: আঘাতের স্থান থেকে দূরে হাড় ভেঙ্গে যায়, যেমন- বাইরের দিকে হাত ছড়িয়ে পড়ে গেলে কলার বোন ভেঙ্গে যেতে পারে।
৩. শক্তিশালী মাংসপেশির ক্রিয়ার আঘাত: এক গ্রুপ মাংসপেশির মারাত্মক সঙ্কোচনে হাড় ভেঙ্গে যায়। যেমন- প্রচণ্ড কাশির কারণে পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। ফ্র্যাকচার ওপেন বা ক্লোজড হতে পারে। ওপেন ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে শুধু হাড়ই নয়, ত্বকের ক্ষতিটাও অনেক বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
কারণ, যেহেতু ওপেন ফ্র্যাকচারে হাড় ত্বক ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে তাই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতে প্রবেশ করতে পারে ও পুঁজ তৈরি করতে পারে। এটির কারণে টিটেনাস ও গ্যাস গ্যাংগ্রিনও হতে পারে। ক্লোজড ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে ত্বক অক্ষত থাকে। যেহেতু হাড় ভাঙ্গে ত্বকের অভ্যন্তরে তাই সেখানে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে না।
বিভিন্ন ধরণের ফ্র্যাকচারঃ-
১. গ্রিন স্টিক ফ্র্যাকচার: যখন কেবল এক দিকের পেরিওস্টিয়াম ভেঙ্গে যায় তাকে গ্রিনস্টিক ফ্র্যাকচার বলে। এটি সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে হয়।
২. কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার:যখন ভাঙ্গা হাড় বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং বেরিয়ে থাকা হাড় ও ক্ষতে ময়লা, ধুলো ও ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, সেটিকে কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার বলে।
৩. সিম্পল ফ্র্যাকচার (ক্লোজড): ভেঙ্গে যাওয়া হাড়ের প্রান্ত ত্বক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে না, তবে উভয় পেরিওস্টিয়াম অন্তর্ভুক্ত হয়।
৪. কমপ্লিকেটেড ফ্র্যাকচার:হাড় ভাঙ্গার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ইনজুরি হয়। যেমন- মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, ফুসফুস ইত্যাদি।
কোনো কারণে হাড়ে ব্যথা পাওয়ার পর যদি সেটি অনেক ফুলে যায়, নড়াচড়া করলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে হাড় ভাঙার আশঙ্কা থাকে। যদিও শুধু এ লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এজন্য দরকার এক্সরে। এক্সরে করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হাড় ভেঙেছে কি না।
অনেকে আলসেমি করে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। এর পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হয়। দ্রুত চিকিৎসা করালে যত তাড়াতাড়ি হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা থাকে, দেরি করলে সেটি ক্ষীণ হয়ে যায়। এমনকি হাড় ঠিক জায়গায় জোড়া না লেগে বেঁকে জোড়া লাগতে পারে বা জোড়া নাও লাগতে পারে।
অনেকে হাড় ভেঙে গেলে বাঁশের চাটাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেন। এতে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত পঁচে যেতে পারে। অনেকে আবার গোবর বা গাছের ছাল বাকলের প্রলেপ দেয়। এতেও হাতে পচন ধরতে পারে।
আসলে হাড় ভাঙলে নড়াচড়া একেবারেই করা যাবে না। রোগীকে ভাঙা স্থানের দুই পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে