| সোমবার, ১৯ মার্চ ২০১৮ | প্রিন্ট
স্বাধীনদেশ অনলাইন : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের দেয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (১৯ মার্চ) সকালে আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদেশের প্রতিক্রিয়া খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানিয়েছেন, আদালত জামিন স্থগিতের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানাননি। তিনি আরও বলেন, একটা অনভিপ্রেত আদেশ হল সর্বোচ্চ আদালতে। জামিনের ক্ষেত্রে সুবিচার পেলেন না খালেদা জিয়া।
এর আগে রোববার (১৮ মার্চ) সকাল পৌনে ১০ টায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুরু হয়ে ১২ টার দিকে শুনানি শেষে আজ (সোমবার) রায়ের দিন ধার্য করে সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।
এডভোকেট মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরোদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমমূলক এই মামলার রায় সারা দেশের কোন জনগন মেনে নেয়নি। আদালত জামিন স্থগিত করার আগে বুঝা উচিত ছিল বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, উনার স্বামী একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক সফল প্রেসিডেন্ট এবং উনি নিজে ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী । তিনি নিজে অসুস্থ এবং বয়স্ক নারী। আদালত এইসব কিছুই আমলে নেয়নি।
এদিন বিষয়টি কার্যতালিকায় ৯ ও ১০ নম্বরে ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এই তথ্য জানান।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় তিনি বারবার অনুকম্পা পেতে পারেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ হবে, আর তার সঙ্গে জড়িত থাকবেন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি, তিনি কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর আগে খালেদা জিয়া বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেছেন। তিনি জামিনের অপব্যবহারও করেছেন। তিনি কোর্টকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি মিসকনডাক্ট করেছেন।’
এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও লালু প্রসাদ যাদবের মামলার নজির আদালতকে পড়ে শোনান। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অসুস্থতার যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, এই অসুখ নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন, বিদেশ গেছেন, তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।’
এর আগে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া যে অসুস্থ, এর সপক্ষে তার আইনজীবীরা চিকিৎসা সনদ আদালতে উপস্থাপন করেননি। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জামিনের অপব্যবহারের অভিযোগ করেন আদালতের কাছে। এসময় তিনি বিচারিক আদালতের আদেশ পড়ে শোনান এবং বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি ছাড়াও বিদেশে গেছেন। এর থেকে জামিনের অপব্যবহার আর কী হতে পারে?
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিনের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছি। হাইকোর্টের জামিন আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। আমরা আবেদন করেছি, লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের দেয়া স্থগিতাদেশ যেন অব্যাহত রাখা হয়। বিষয়টি কার্যতালিকার ৯ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ অব্যাহত রাখতে ভিন্ন একটি আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষও। বিষয়টি কার্যতলিকার ১০ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
এদিকে, আপিল বিভাগের এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া। উভয় ক্রমিকেই এই বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। এই বিষয়টিও শুনানির জন্য একসঙ্গে উঠেছে।
গত বুধবার দুপুরের পর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে এই আবেদন উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই দিন সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রোববার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করার নির্দেশ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার লিভ টু আপিল করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনের ওপর দেয়া স্থগিতাদেশ অব্যাহত রাখার আবেদনও করেছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করে ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে জামিনের জন্যও আবেদন করেন তিনি। এরপর হাইকোর্ট তাকে চার মাসের জামিন দেন।
হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আলাদা দুটি আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রোববার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য রোববারের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছিল মামলাটি। একই সঙ্গে স্থগিতাদেশ অব্যাহত ও প্রত্যাহার চাওয়ার আবেদনও শুনানির জন্য রাখা হয়েছিল।
Posted ১২:০২ | সোমবার, ১৯ মার্চ ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain