
| শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | প্রিন্ট
অনেক জল্পনা, কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে শনিবার সকাল ১১টায় এই সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর গ্রহণ করা হয় শোক প্রস্তাব। এতে গত দুই বছরে মৃত্যুবরণ করা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ প্রয়াত দলীয় নেতাদের নামে শোক প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ১৭৮ জনের নামে শোক প্রস্তাব করেছে দলটি। তাদের তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
শোকপ্রস্তাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, বিশ্বখ্যাত গায়ক জর্জ মাইকেল, ভারতীয় চলচ্চিত্রা ভিনেতা শশী কাপুর, কবি ও গীতিকার লিওনার্দ কোহেন, মহাকাশচারী জন গ্লেন, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতা, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক জোনাথন ডেম, জেমস বন্ডখ্যাত অভিনেতা রজার মুর প্রমুখ।
জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকার বারী সিদ্দিকী, আইনজীবী টিএম আকবর, সংগীত শিল্পী আব্দুল জব্বার, সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ, অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক, কণ্ঠশিল্পী লাকী আকন্দ, সাংবাদিক সাজ্জাদ কাদির, খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আখতার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।
বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, এমকে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও খুলনার সাবেক মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমানসহ ১২৮ জনের মতো প্রয়াত বিএনপি নেতা।
শোক প্রস্তাবের পর সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টিতে নির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়েছে। ২২টিতে নির্বাচনের মাধ্যমে আংশিক কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সাতটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ইতিমধ্যে ৭০ লাখের বেশি প্রাথমিক সদস্য ফরম কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিতরণ করা হয়েছে। এরপর লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে অংশ নিতে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সভাস্থলে আসতে শুরু করেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা। তারা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করে সভাস্থলে প্রবেশ করেন।
নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে সভা শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই এই সভা নিয়ে সরকারের নানা রকম অসহযোগিতা আমরা লক্ষ্য করেছি। কোথাও জায়গা পাচ্ছিলাম না আমরা। অবশেষে এখানে সভার আয়োজন করা হয়। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে। অনেক ধরপাকড়, হামলা, মামলার পরও নির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের অংশগ্রহণে সভা শুরু হয়েছে। এতে আমরা স্বস্তিবোধ করছি।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ৫০২ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্তত চার শ জন সদস্য উপস্থিত রয়েছেন সভায়। এ ছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের অনন্ত ৪০ জন সদস্য সভায় উপস্থিত রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এয়ারভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এম এ মান্নান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, শাহজাদা মিয়া, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় তড়িঘড়ি করে এই সভা আহ্বান করে বিএনপি। সভা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মহানগর নাট্যমঞ্চ, পূর্বাণী হোটেল ও ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরা বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা পারেনি বিএনপি। অবশেষে লা মেরিডিয়ানে সভা করার সুযোগ পায় তারা।
ধারণা করা হচ্ছে, এই সভা থেকে তৃণমূল নেতাদেরকে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সম্পর্কে একটা দিকনির্দেশনা দেবেন বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। তার আগে সবার উদ্দেশে একটা উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন তিনি।
Posted ০৬:৩৮ | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain