
মধ্যপ্রাচ্যের ইরাকের উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৯ জন কুর্দি সেনা নিহত হয়েছে। হামলায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে)’র আশ্রয়কেন্দ্র, লুকানোর স্থান ও অস্ত্রাগারগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের সেনাবাহিনীর লিখিত বিবৃতির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ১৯টি লক্ষ্যস্থলে এ হামলা চালানো হয়েছে। খবর রয়টার্সের
খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের সীমান্ত চৌকিতে পিকেকে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলেই তুর্কি সেনারা পাল্টা এ হামলা চালায়।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আসোস/কান্দিল, জাপ, আভাসিন/বাসিয়ান এবং হাকুর্ক অঞ্চলে দফায় দফায় বিমান হামলা চালানো হয়।
গত কয়েক দশক ধরে চলা পিকেকে ও তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ের হামলায় প্রায় অর্ধলাখ লোকের প্রাণহানি হয়েছে। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে কুর্দি সংগঠন পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফিলিস্তিন নেতা ইয়াসির আরাফাতকে যেভাবে হত্যা করে ইসরাইল
ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাতকে রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে ইসরাইল। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইয়াসির আরাফাত ছিলেন প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল অথোরিটির (পিএনএ) প্রেসিডেন্ট ও প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন অরগানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান।
ইসরাইলি গোয়েন্দা ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফাস্ট: দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অব ইসরায়েল’স টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন্স’ বইয়ে এই দাবি করেছেন ইসরাইলের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক রনিন বার্গম্যান।
রনিন বার্গম্যান ইসরাইলের শীর্ষ পত্রিকা ইয়েদিওথ আহরোনথের জাতীয় নিরাপত্তা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়ও কন্ট্রিবিউট করেন।
রনিন লিখেছেন, ইসরাইল যুদ্ধের পরিবর্তে গুপ্তহত্যা চালায়। এমনকি এ প্রক্রিয়ায় শত্রু রাষ্ট্র ইরানের প্রায় আধাডজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে তেল আবিব। ৭০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে এই গুপ্তহত্যা মিশন চালাচ্ছে ইসরাইল। বিভিন্ন দেশে নানা কৌশল ব্যবহার করে কমপক্ষে দুই হাজার তিনশটি হত্যা মিশন চালিয়েছে দেশটি। টুথপেস্টে বিষ মিশিয়ে, ফোন বিস্ফোরণ, সশস্ত্র ড্রোন ও গাড়ির অতিরিক্ত চাকায় পেতে রাখা দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা ফাটিয়ে এসব হত্যা মিশন পরিচালনা করা হয়।
বিষ প্রয়োগেই ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা
ফিলিস্তিনিদের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। খবর আল জাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্স’র। (৭ নভেম্বর ২০১৩)
স্বাধীনতাকামী এই নেতার দেহাবশেষ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি পরীক্ষার পর সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, তার দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮ গুণ উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়ামের অস্তিত্ব ছিল।
প্রতিবেদনটি হাতে পেয়ে ইয়াসির আরাফাতের স্ত্রী সুহা আরাফাত বলেছেন, ‘এখন আর সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রমাণ হল, এটা ছিল হত্যাকাণ্ড।’
ইয়াসির আরাফাতের দেহে পাওয়া পোলোনিয়াম-২১০। সাধারণ খাবারের মধ্যে স্বল্পমাত্রায় থাকে, মানবদেহেও প্রাকৃতিকভাবে এর অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে অতিমাত্রায় দেহে প্রবেশ করালে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ২০০৮ সালে ফ্রান্স মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্ট্রোকের সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে জটিলতাকে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
তবে শুরু থেকেই অনেক ফিলিস্তিনিদের সন্দেহ ছিল, তাদের নেতাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং এর পেছনে ইহুদীবাদী ইসরাইলের হাত রয়েছে।
তবে এর আগে হত্যার কয়েকটি ষড়যন্ত্রের তথ্য ছাড়া এই সন্দেহের পক্ষে কোনো জোরাল প্রমাণ ছিল না। আর ইসরাইলও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
তবে আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে আল জাজিরার এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হলে নতুন করে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে। এর রেশ ধরে গত বছর ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ইয়াসিরের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে আবার পরীক্ষা চালানোর কাজ শুরু হয়।
এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া সুইস বিশেষজ্ঞদের ১০৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শবদেহে ‘অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চমাত্রার’ তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা প্রকারান্তরে বিষপ্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়।
তবে মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর অনুসন্ধান কাজ শুরু করার কারণে অনেক আলামত চিহ্নিত করা দুরূহ ছিল- তা স্বীকার করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান গবেষকরা।
সুহা আরাফাত সুইস গবেষকদের প্রতিবেদন পেয়ে আরো বলেন, ‘এটি একটি সাচ্চা অপরাধ, একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদন আমাদের সব সন্দেহ দূর করেছে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তাকে হত্যা করা হয়।’
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল- সেই বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি সুহা। তবে বলেছেন, তার স্বামীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অনেক শত্রু ছিল।
আরাফাত ৩৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় দলগুলোর মূল সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি, এসেছিলেন বাংলাদেশেও। ১৯৯৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের ২৫তম স্বাধীনতা দিবস বা হীরক জয়ন্তীতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালে পশ্চিম তীরে নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী আরাফাত। এর দুই সপ্তাহ পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফ্রান্স নেয়া হয়। ওই বছর ১১ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।