রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব অত্যান্ত প্রতিযোগিতা মূলক, এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ও আন্তর্জাতিক মানের হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বহুমূখী জ্ঞান চর্চার অবার্ধ বিচরন ক্ষেত্র। পাঠ্যসূচীর বাইরে ও শিক্ষার্থীরা যাতে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখতে হবে। বানিজ্যিকরন শিক্ষার গুনগতমানকে ব্যাহত করে অনেক ক্ষেত্রে মেধা বিকাশের পথকে বাঁধাগ্রস্থ করে। তাই শিক্ষার বানিজ্যিকরন বন্ধ করতে হবে। সার্টিফিকেট একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বীকৃতি হলেও শিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে পারেনা।
এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে আজকে যারা বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছো তোমরা তোমাদের ডিগ্রীর যথাযথ সম্মান এবং অর্জিত জ্ঞানকে দেশ ও জনগনের কল্যানে কাজে লাগাবে। বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতি তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। এ স্মরনীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য ও অর্জন যেমন আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় তেমনি তাদের দায়িত্বও অর্পন করা হয়। সে দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম চিরকাল সত্য ও সুন্দরের ধ্যান করেছেন, সাম্যের গান গেয়েছেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন, মানবতার জয়গান গেয়েছেন। কবি সত্যকে দেখেছেন সবার উপরে। তিনি বলেছেন প্রানের ভেতরের যে সত্য, যে ধর্ম, তাহার উপর কোন ধর্ম নাই। আমার বিশ্বাস জাতীয় কবির কালজয়ী আহবান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটগন তাদের মেধা, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতীর কল্যানে কাজ করবে।
নজরুল আমাদের জাতীয় কবি, গানের কবি, বিদ্রোহী কবি। তার নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় কবির বিস্ময়কর সৃষ্টিশীল কর্ম যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজান্মান্তরে ছড়িয়ে দিবে তেমনি তার প্রতি আমরা সত্যিকারার্থে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো। কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে নজরুলের কবিতা, গান, নাটকসহ সার্বিক ভাবে তার সাহিত্য কর্ম নিয়ে গবেষনার উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন বিশ্ব পাঠশালার এক ধীমান সাহসী যোদ্ধা নজরুল। জীবন সত্য অন্বেষনে তিনি ছুটেছেন নিরন্তর। নজরুলের সাথে ত্রিশালের ছিল গভীর সম্পর্ক। নজরুল ত্রিশালকে দেখেছেন তীর্থস্থান হিসেবে। ত্রিশালে স্মৃতি বুকে ধারন করে তিনি ময়মনসিংহবাসীর উদ্দেশ্যে পত্র লিখেছেন। সেই পত্রে তিনি লিখেছেন ময়মনসিংহ আমার কাছে নতুন নহে। এই ময়মনসিংহ জেলার কাছে আমি অশেষ হ্রনে হ্রনী। আমার বাল্যকাল এ অনেক গুলি দিন ইহার বুকে কাটিয়া গিয়াছি। এখানে থাকিয়া আমি কিছু দিন লেখাপড়া করিয়া গিয়াছি। আজও আমার মনে সেই সব প্রিয় স্মৃতি উজ্জল ভাস্কর হইয়া জ্বলিতেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সেই দিন আর বেশী দূরে নয় যে দিন শেক্সপিয়র, হাফিজ, শেখ সাদীর জন্মস্থানের মত ত্রিশাল ও সারা বিশ্বে পরিচিত হবে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত কবিতীর্থ স্থান হিসেবে। সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম।
ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার ড. হুমায়ুন কবীরের পরিচালনায় এতে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর এএমএম শামসুর রহমান। এ সময় রাষ্ট্রপতি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শত গ্র্যাজুয়েটের মাঝে সনদ বিতরন করেন এবং তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ৩২ জন মেধাবী গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণ পদক প্রদান করেন।