
| বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট
বাঙালি জাতি পয়লা বৈশাখের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে (১৪২৪) বরণ করে নেবে।
বাংলা নববর্ষকে প্রতিবছরই হালখাতার মাধ্যমে একটু আলাদাভাবে বরণ করেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এবারো খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত তারা।
নতুন ঢাকার ব্যবসায়ীরাও হালখাতা করেন। তবে পুরান ঢাকায় যেভাবে হালখাতা করা হয় তার জুড়ি নেই। বাংলা নববর্ষেরর প্রথম দিনেই তারা লালসালু কাপড়ে মোড়ানো নতুন খাতা খুলবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের আড়ত, শ্যামবাজার, ইসলামপুরের কাপড়ের দোকান, তাঁতীবাজার ও শাঁখারীবাজারের জুয়েলার্স দোকানে বেশি হালখাতা হয়। চৈত্র মাসেই নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আবার অনেকে ব্যবসায়ী নিমন্ত্রণপত্র দেওয়ার পাশাপাশি মুঠোফোনে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পয়লা বৈশাখের দিন সনাতন ধর্মের ব্যবসায়ীরা গণেশ পুজো দিয়ে আতরবাতির ধোঁয়া, সোনা-রূপার পানি ও গোলাপ জল ছিটিয়ে হালখাতা শুরু করবেন। বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এসে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন। তাদেরকে মিষ্টিসহ বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন করা হবে। আবার তারা নতুন করে লেনদেন শুরু করবেন।
মুসলিম ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিলাদ-মাহফিল ও গোলাপ জল ছিটিয়ে শুরু করবেন বছরের প্রথম দিনের কাজ। অতিথি আপ্যায়নে ব্যবসায়ীরা নামকরা মিষ্টির দোকানে অর্ডার দিয়েছেন। পাশাপাশি থাকছে বিস্কুটসহ বিভিন্ন ফলমূল।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, উর্দু রোড, চকবাজার, মোঘলটুলিসহ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ‘শুভ নববর্ষ’, ‘শুভ হালখাতা’ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছেন তাদের দোকানের সামনে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রঙের বাতি, ফুল, শোলা দিয়েও সাজিয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কথা হয় তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অরুন কর্মকার এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার নতুন বছর শুরু হবে। এ নতুন বছরের প্রথম দিনে (পয়লা বৈশাখ) সকালে গণেশ পুজো দিয়ে আগরবাতির ধোঁয়া, সোনা-রূপার পানি ও গোলাপ জল ছিটিয়ে নববর্ষ পালনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করা হবে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের কাছে কত টাকা পাওনা আছে তা উল্লেখ করে দাওয়াতি কার্ড পাঠানো হয়েছে। তারা এসে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন। আর আমরা তাদেরকে মিষ্টি, দই, চিরাসহ বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াবো।’
এ বিষয়ে কথা হয় মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নিজামউদ্দীন বেপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের দিন আমার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোল্লা (হুজুর) দিয়ে মিলাদ পড়াব। তারপর বিভিন্ন এলাকা থেকে কাস্টমার (ক্রেতা) এসে তাদের বকেয়া টাকা দিয়ে দেবেন। তাদের নাম টালি খাতা থেকে কেটে দেওয়া হবে। নতুন খাতায় নাম উঠানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের আপ্যায়ন করানো হবে। নতুন করে টালি খাতায় নাম উঠানো হবে। তাদের সঙ্গে ফের লেনদেন শুরু হবে। আপ্যায়নের জন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি মিষ্টি ও ফলের দোকানে অর্ডার দেওয়া হয়েছে।’
তাঁতীবাজারের শঙ্খস্মৃতি ভাণ্ডারের মালিক সুকুমার হালদার বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে পুজো সেরে নতুন টালি খাতা খোলা হবে। যাদের কাছে টাকা বকেয়া রয়েছে তাদের দাওয়াত কার্ড দেওয়াসহ মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তারা প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বকেয়া টাকা দিয়ে নতুন খাতায় নাম উঠাবেন। আমরা তাদের দই-মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করাব।’
এদিকে স্বর্ণের দাম খুব চড়া হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে। ফলে বেচাবিক্রি তেমন ভাল হয়নি বলে জানালেন শাঁখারী বাজারের তিথী জুয়েলার্সের মালিক সাগর রাজবংশী। তিনি বলেন, ‘এখনতো কেউ আর ১০/১২ ভরি স্বর্ণের গহনার অর্ডার দেয় না। এমনকি বিয়ে-সাদিসহ বিভিন্ন দাওয়াতে স্বর্ণের জিনিস উপহার দেওয়া কমে গেছে। বাড়িতে বিয়ে-সাদির অনুষ্ঠান হলে গহনার অর্ডার দিচ্ছে ৪/৫ ভরি। তাই আমাদের ব্যবসা এখন মন্দা যাচ্ছে। তারপরেও বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য হালখাতা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে দাওয়াত দিয়েছি। তারা আসলে মিষ্টিমুখ করিয়ে বকেয়া টাকা তোলা হবে। হালখাতা না করলে বাকি টাকা তাদের কাছ থেকে তোলা যায় না।
Posted ১০:০২ | বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain