
| রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট
আগামী আট দিনের মধ্যে যে কোনো সময় জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার থেকে ১৭ এপ্রিল সোমবারের মধ্যে যে কোনো সময় এই দণ্ড কার্যকর করা হবে।
রবিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) মুফতি হান্নানের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে তার ফাঁসি কার্করে আর আইনি বাধা নেই। এখন কারাবিধি অনুযায়ী তার ফাঁসির রায় যেকোনো সময় কার্যকর করা হবে।’
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা.) এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়েছে মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগী বিপুল ও রিপনের। গত ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে দণ্ড বহাল রাখে। পরদিন মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয় তিন জঙ্গিকে। সেদিনই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানান।
গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী বিপুল এবং সিলেট কারাগারে বন্দী রিপন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। শনিবার রাতে সে আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এখন সরকারের নির্বাহী আদেশ যাবে। এটি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। যেকোন সময় সেটি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে। এরপর তার ফাঁসি কার্করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, ‘যেদিন তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। সেদিন থেকে ২১ দিনের কম নয় এবং ২৮ দিনের বেশি নয় এমন সময়ের মধ্যে ফাঁসি কায্যকর করার নিয়ম রয়েছে। সে হিসেবে ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যেই মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্কর হবে। ‘
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার শুরুর থেকেই আলোচিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। সেই সঙ্গে মুফতি হান্নানও পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর সমাবেশে, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এবং পল্টনে সিপিবির সমাবেশ ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বোমা হামলা, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার জন্য সমাবেশের অদূরে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা এবং ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি মুফতি হান্নান। শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মুফতি হান্নান। এরপর বিভিন্ন মামলায় টানা ১২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। তখনই গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করাসহ বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু তা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রকাশ করেনি।
মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায়৷ তিনি গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ও বরিশালের শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। এরপর ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দাওরা হাদিস পড়াকালে ১৯৮৭ সালে ওই দেশের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরের বছর ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যান এবং করাচির জামিয়া ইউসুফ বিন নূরিয়া মাদ্রাসায় ফিকাহশাস্ত্রে ভর্তি হন৷ সেখান থেকে তিনি সীমান্তবর্তী শহর খোস্তে মুজাহিদ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি পেশোয়ারে কুয়েত আল-হেলাল হাসপাতালে ১০ মাস চিকিৎসা নেন। এরপর করাচির ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করেন।
মুফতি হান্নান ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরেন এবং পাকিস্তানভিত্তিক হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়ে তৎপরতা শুরু করেন। অবশ্য এর আগেই আফগানফেরত এদেশীয় মুজাহিদরা হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ গঠন করেন। মুফতি হান্নান ১৯৯৪ সালে এই সংগঠনে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার থানা প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্প দিনের মধ্যে তিনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসেন। হুজিতে থাকার পাশাপাশি মুফতি হান্নান হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়েও কার্যক্রম চালাতেন।
Posted ০৯:০৩ | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain