| মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিনজনের রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দেয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতিদের সইয়ের পর মঙ্গলবার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছন।
রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, পাঁচ পৃষ্ঠার রায়ের কপিটি এখন কারাগার এবং সিলেটের বিচারিক আদালতে পাঠানো হবে।
গত ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ তাদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে এখন শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন ছাড়া আর কোনো আইনগত বাধা নেই।
মুফতি আবদুল হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ৭ ডিসেম্বর আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় সংক্ষিপ্তভাবে রায় ঘোষণা করেন।
গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন মুফতি হান্নান।
আইনজীবীরা জানান, রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ গণনা শুরু হবে। আদেশের কপি হাতে পেয়ে জেল কোড অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ‘২১ দিনের আগে নয় এবং ২৮ দিনের পরে নয়’ বলে যে বিধান রয়েছে তা অনুসরণ করবে জেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করলে তারপর আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হবে।
আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায়ে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি ও দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল সিলেটের একটি আদালত।
হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৬৭ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করে। ওই বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। ঘটনার দিন অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। প্রায় সাত বছর পর গত ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শেষ হয়।
Posted ০৬:২২ | মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain