
| শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের (কুসিক) প্রচারণা শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচারণায়। হেভিওয়েট দুই প্রার্থী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু কোমর বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। আর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে আশা প্রকাশ করলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি প্রার্থী।
এছাড়া বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। আর সাধারণ ভোটাররা অপেক্ষায় আছেন ভোটের দিনের পরিবেশ কী রকম থাকে তার জন্য। তবে সবার মতেই নির্বাচনী পরিবেশ গড়পড়তায় এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু রয়েছে। শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে এ রকম তথ্য জানা গেছে।
কুসিকের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ব্যবসায়ী রিপন বলেন, পরিবেশ এখনো ভালো আছে তবে প্রচারণা পুরোদমে জমেনি। কে জয়ী হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন তিনি।
কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, এ নির্বাচনে জয়ী হতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমান সমান সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যা বিএনপি প্রার্থীর জন্য বাড়তি সুবিধা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো আছে। শেষে অন্যান্য নির্বাচনের মতো হবে কি না জানি না। তবে এখনো মনে হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো সুষ্ঠু আছে। প্রশাসন চাইলেই এখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়া সম্ভব। আর আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে বলা যাচ্ছে না কে জয়ী হবেন।
অটোরিকশা চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো সুষ্ঠু আছে। যেই জিতুক আমরা চাই সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হোক।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মাখন সরকার বলেন, এখানে কে জয়ী হবেন সেটা এখনি বলা যাচ্ছে না। এখনো পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। আমরা চাই পরিবেশটা ভোটের দিন পর্যন্ত বজায় থাকুক।
কথা হলে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থরা এরই মধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার মহড়া শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসার কঠোর অবস্থান না নিলে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত সুন্দর হবে না। আমরা চাই ভোটাররা প্রত্যেকেই অবাধে, নির্ভয়ে ও সুষ্ঠৃ পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাক।
সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী সম্বয়ক মো. কাইমুল হক রিংকু অভিযোগ করেন, কুমিল্লা সদর থানা দক্ষিণের ওসি নজরুল ইসলামের আচরণ দলীয় কর্মীদের থেকেও ভয়ঙ্কর। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। তার এ রকম আচরণ চলতে থাকলে নির্বাচন কমিশনের নতুন ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টা বিফলে যাবে।
তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ডিবি পরিচয়ে আমাদের কর্মী সমর্থকদের নির্বাচনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে যার যার মতো বাসায় ফিরে যান।
এ বিষয়ে ওসি নজরুল ইসলামের সঙ্গে য্গোাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিএনপি প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের সন্ধ্যার ডিবি পরিচয় দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং কুমিল্লা দক্ষিণের ওসি নজরুল ইসলাম বিএনপি প্রার্থীকে অফিস করতে দিচ্ছে না পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসাইন বলেন, প্রার্থীকে যে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দিচ্ছে না বা পুলিশ যে অসহযোগিতা করছে এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। কোনো রকম হানাহানি রেষারেষি নেই্। আশা করি এখানে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, আমি এখনো যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালোই আছে। কেউ আমাকে এখন পর্যন্ত নিরাশ করেননি। উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা গণসংযোগ করছি।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এখনও পর্যন্ত এ বিষয়টি শুনতে পাইনি। আগে জানা ছিল না।
সীমার নির্বাচনী সমন্বয়ক নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মডেলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে চায়। দলীয় প্রধান এবং সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে আমাদের এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তৃণমূল পর্যন্ত অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। নেতৃত্ব পর্যায়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও তৃণমূলে এর প্রভাব পড়বে না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল
বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো পর্যন্ত ভালো আছে। শনিবার প্রার্থী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কমিশন বৈঠক করবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা কয়েটি ওয়ার্ড ঘুরেছে। সেখানে তারা বড় ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গ দেখতে পায়নি। টিমের সঙ্গে পুলিশের তিনটি গাড়িও ছিল। কোথাও কোনো আচরণবিধি লঙ্গনের ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশন বদ্ধ পরিকর।
আমরা বলেছি নির্বাচন উপলক্ষে কেউ যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে। নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখে। ভোটাররা যাতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দিতে পারে আমরা সে বিষয়ে সচেষ্ট আছি। কোনো রকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
কুসিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) শিরিন আক্তার তারা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর অব. মামুনুর রশিদ টেবিল ঘড়ি মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪০ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর এই সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ মার্চ। পরিবর্তন
Posted ১৮:৫৫ | শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain