
| শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
রাহাত : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট রেখে নানা মাত্রায় প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। দলটি নির্বাচিত হলে দেশকে একটি ‘সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে’ পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। খুব শিগগিরই দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও অঙ্গনে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গর উপস্থিতিতে তুলে ধরবেন এই কর্মপরিকল্পনা। দলের নেতাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হলেও বাস্তবে তা ঘোষণায় বিলম্ব হবে বলে জানা গেছে। মূলত নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণার আগে দেশের জনগণের মাঝে বিএনপির মিশন-ভিশন তুলে ধরতে চান বেগম জিয়া। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই ‘ভিশন-২০৩০’ পুস্তিকা আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে দলটির। এর আলোকেই দলের নির্বাচনী ইশতেহার রচিত হচ্ছে। গত বছরের ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিলে খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ কিছুটা ধারণা তুলে ধরেছিলেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের অগ্রসর চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পরিকল্পনাবিদ, গবেষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ‘ভিশন-২০৩০’ চূড়ান্ত হয়েছে। এর অন্যতম প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে-‘সমৃদ্ধ দেশ এবং আলোকিত সমাজ গড়া’।
জানা গেছে, ‘ভিশন ২০৩০’ এর পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে-২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় হবে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। জনগণের সেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘ন্যায়পাল’ এর পদ ও কার্যালয় সক্রিয় করা হবে। বাংলাদেশের জনগণের সব ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী, নৃ-গোষ্ঠী, পাহাড় ও সমতলবাসীসহ সবাইকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে একটি ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তোলা, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণœ রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করা। প্র্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সৃজনশীল, ইতিবাচক ও ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে। বিএনপি চায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। বিচার, প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও খাবার পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষন, পরিচ্ছন্নতাসেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে। সুষ্ঠু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পাঁচ বছরের মধ্যে সমাধান করা হবে। বিএনপি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে সন্ত্রাসবাদকে নিরুৎসাহিত ও নির্মূল করার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। ‘শুধু ধনীদের জন্য শিক্ষা নয়’, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এক দশকের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। মায়েদের জন্য স্নাতক এবং ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে। শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে পৃথক একটি চ্যানেল চালু করা হবে।
প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে কৃষি উপকরণ সুলভ ও সহজলভ্য করা হবে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা হবে। কৃষকদের জন্য শস্যবীমা কর্মসূচি চালু করা হবে। দেশের সকল নাগরিকের চিকিৎসার জন্য জিপি ও রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। সুন্দরবনসহ জাতীয় ঐতিহ্যসমূহ সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাক্সিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির জন্য বিএনপি যথোপযুক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এ লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত সকল প্রকার জ্বালানি ও সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং জেলা ও উপজেলা শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীগুলোতে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হবে। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। বিরাজমান বাধাগুলো দূর করে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে উৎপাদন ও সেবাখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বহুগুণ বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ হবে জাতীয় ঐক্য ও প্রেরণা সৃষ্টির উৎস।
‘ভিশন-২০৩০’ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভিশন-২০৩০’ বিএনপির রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অনন্য দলিল। এই ভিশন দেশের মানুষের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি করবে। বিএনপি’র এই কর্মপরিকল্পনা সুস্থ রাজনীতির চর্চা, গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত, সমাজে চলমান বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সহায়ক হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সমৃদ্ধ ও আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে ‘ভিশন-২০৩০’ বাস্তবায়নে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। ইত্তেফাক
Posted ১৮:৪০ | শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain