
| শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যু, প্রবীণ নেতা হারুনার রশীদ খান মুন্নুর নিষ্ক্রিয়তা এবং আরও নানা কারণে মানিকগঞ্জ বিএনপির কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আবার দলের ভেতর তৈরি হয়েছে রেষারেষি আর শত্রুতা। বিপক্ষের দলের তুলনায় দলের ভেতরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েল করতেই বেশি চেষ্টা চলছে। বিএনপিতে এই কোন্দল আর দ্বন্দ্বের সবশেষ নমুনা দেখা গেল প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে।
ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে এই নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মসূচি ছিল মানিকগঞ্জে। তাদেরকে উপেক্ষা করেই আবার জেলায় আলাদা কর্মসূচি পালন করে বিএনপিরই একটি অংশ।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাঁচুরিয়া এলাকার হোসেন আলী হোসেন বিএনপির ঘোর সমর্থক। বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে বিএনপির আসা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন। সেখানে বিএনপির একটি অংশের অনুপস্থিতি দেখে ক্ষোভ জানান তিনি।
আলী হোসেন বলেন, জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কোন্দল ব্যাপক। আর এই দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না দল।
বিএনপি সমর্থকের এই ক্ষোভের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘আমরা শুনেছি প্রয়াত মহাসচিবের পরিবার পারিবারিকভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে। ওই অনুষ্ঠানে কার্ড দিয়ে যাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র তারাই গিয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রয়াত মহাসচিবের ওই অনুষ্ঠানে আমাদের মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে কোন কার্ডও দেওয়া হয়নি। আমরা কীভাবে ওই অনুষ্ঠানে যাই?’
এস এ জিন্নাহ বলেন, ‘মহাসচিব স্যার আমাদের কাউকে বলেননি যে সে মানিকগঞ্জ আসছেন। যদি মহাসচিব আমাদেরকে উপস্থিত থাকতে বলতেন তাহলে আমরা অবশ্যই উপস্থিত থাকতাম।’ তিনি বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীকেই দাওয়াত দেয়া হয়নি। এ কারনে জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী যাননি।’
যেখানে দলের মহাসচিব আসছেন, সেখানে আপনারা যাননি এটা দলের জন্য মঙ্গলজনক কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমাদের দাওয়াত না দেওয়াটাই দলের জন্য অমঙ্গলজনক।’
এ ব্যপারে কথা হয় বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও মানিকগঞ্জ বিএনপির সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আব্দুল হামিদ ডাবলুর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে দাওয়াত কার্ডও পাঠানো হয়েছে। অর্থচ এখন তারা দাওয়া নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে।’
ডাবলু বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম খান শান্ত, বিএনপির সহ-সভাপতি জামিলুর রশিদ খান, আজাদ হোসেন খান, মুতালেব হোসেন ও আব্দুস সালামসহ অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন। কিছু কিছু নেতা ব্যস্ত থাকার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেনি।’
দেলোয়ার পুত্র বলেন, এই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন না, তাদের কারণে জেলা বিএনপির ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাবলু বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার বাবার সঙ্গে আমার বাবা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের যে দ্বন্দ্ব ছিল তারই বর্হিঃপ্রকাশ ঘটেছে এখানে। আফরোজা খান রিতার স্বৈরাচারি মনোভাবের জন্য জেলা বিএনপির আজ এই অবস্থা।’
খোন্দকার দেলোয়ারের স্মরণে অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার সমর্থকরা না গেলেও ঢাকা আরিচা মহাসড়কের গিলন্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে আসা কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জিয়াউল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইছাক সরকারকে তারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
তবে বিএনপির মহাসচিব অনুষ্ঠান শেষ করে দ্রুত চলে যাওয়ায় তার সাথে আফরোজা খান রিতার সমর্থকরা কুশলবিনিময় করতে পারেনি।
এরপর জেলা বিএনপির আয়োজনে জেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ষষ্ঠতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্তসহ তার কোন সমর্থক এবং বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের কোন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
Posted ০৮:৪৬ | শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain