জিহাদিদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট গতকাল একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওতে তার নাম আবু মরিয়ম আল-বাঙালি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছর র্যাবের পক্ষ প্রকাশ করা নিখোঁজ ব্যক্তিদের প্রথম তালিকায় নিয়াজের (৩০) নাম ছিলো। ওই তালিকায় ২৬২ জন নিখোঁজ থাকার কথা উল্লেখ করেছে র্যাব।
নিয়াজের জন্ম চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার চিকনদানিয়া ইউনিয়নের খন্দকিয়া ইউনুসনগর গ্রামে। তার আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান চট্টগ্রাম শহরের সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজে সে পড়ালেখা করে।
দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তার কয়েকটি ছবি দেখানো হলে আব্দুল কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ছবিতে থাকা যুবকের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দেন। কয়েকজন গ্রামবাসীও ছবির ব্যক্তিকে নিয়াজ হিসেবে নিশ্চিত করে।
কাইয়ুম বলেন, “সে আমার ভাইপো। ২০১২ সালে আমি তাকে শেষবারের মত দেখি।”
কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান তারা শুনেছেন নিয়াজ ঢাকায় থাকে। পড়ালেখার জন্য সে অস্ট্রেলিয়া গেছে এমন কথাও তারা লোকমুখে শুনেছেন।
নিয়াজ সম্পর্কে তার এক স্কুল বন্ধু জানায়, বন্ধুদের সাথে সে নিয়মিত ঘুরতে যেতো ও পার্টি করতো। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সে দেয়াকিন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক বন্ধু জানায়, “সে আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলো। সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।”
“দেশে ফিরে সে বিয়ে করে। কিন্তু তখন সে আর আগের মত ছিলো না। দৈন্য দশার মধ্যে তার দিন পার হচ্ছিলো। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় কেউ হয়ত তাকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে।”
তিনি আরও জানান, সম্ভবত সর্বশেষ ২০১৪ সালে সে দেশে এসে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে রেখে চলে যায়।
তবে ইরাকে আত্মঘাতী হামলায় নিয়াজের মৃত্যুর বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
র্যাবের তথ্য বলছে, রাজধানীর বারিধারায় বসবাস করত নিয়াজ। তিন বছর আগে সে নিখোঁজ হয়।
সাইটের প্রকাশ করা ভিডিওতে নিয়াজকে ইংরেজিতে “জিহাদে যোগ না দিয়ে অলসভাবে বসে থাকা” লোকদের সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। জিহাদ না করে ৫০-৬০ বছরের জীবনের অর্থ নিয়েও প্রশ্ন করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
ইসলামি বোদ্ধারা বলছেন, শুধুমাত্র বিপথগামী লোকেরা ইসলামের নামে এমন কথা বলতে পারে।
ছবি শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রামে @neazmorshedraja নামে তার একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নিজে কোন ছবি শেয়ার না করলেও সে ৯৮ জনকে অনুসরণ করতো। সে যাদের অনুসরণ করতো তাদের মধ্যে আফিকুজ্জামান খান ও শাম্মুর রায়হান রয়েছে। এই দুজন রাজধানীর কল্যাণপুরে গত বছর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়। শাম্মুরের নিকটাত্মীয় শাজাদ রৌফ অর্কের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।
এছাড়াও ইনস্টাগ্রামে নিয়াজ যাদের অনুসরণ করতো তাদের মধ্যে আইএস এর সদস্য রয়েছে। এছাড়াও তার ফেসবুক ওয়ালে কট্টর ইসলামি পোস্ট রয়েছে।
জঙ্গিদের গতিবিধি নজরদারি করেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নিয়াজ প্রথমে তুরস্কে যায়। আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে সেখান থেকে সে ইরাকে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, “খুব সম্ভবত কক্সবাজারের একটি সাইবার ক্যাফে থেকে তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করে সে। এর পর সে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়।”