
| শুক্রবার, ০৩ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই নেতা আফজাল খান ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে দলের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে দলের নেতা শামীম ওসমানের দ্বন্দ্ব যেভাবে নিরসন হয়েছে সেভাবেই নিরসন হবে কুমিল্লার দ্বন্দ্ব।
শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আগামীকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে সংগঠনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমও যিনি বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
কুমিল্লায় ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ভুগেছে বাহার ও আফজালের মধ্যকার বিরোধের কারণে। একাধিক নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য দুই নেতার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে দায়ী করা হয়। এবারও আফজাল খানের মেয়ে প্রার্থী হওয়ায় বাহারের অনুসারীরা বিষয়টা কীভাবে নেয় তা নিয়ে কথা উঠেছে এরই মধ্যে। ২০১১ সালের প্রথম মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল আফজাল খানকে। কিন্তু তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান। এই পরাজয়ের জন্যও আওয়ামী লীগের বিভেদকে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
তবে ওবায়দুল কাদের মনে করেন এই দ্বন্দ্ব আগামী ৩০ মার্চের ভোটে তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কুমিল্লার মতই তীব্র ছিল? সেটা আমরা মিটিয়ে ফেলেছিলাম। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দলীয় প্রার্থী (সেলিনা হায়াৎ আইভী) বিজয়ী হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে যেটা সম্ভব, কুমিল্লাতেও সেটা সম্ভব।’
কাদের বলেন, ‘জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিবে। কিন্তু আমরা আশা করি আমাদের দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়বে। আর নির্বাচনে আমাদের দল থেকে ভিন্ন কোন প্রার্থী দেয়া হয়েছে? আওয়ামী লীগ একটি বড় পরিবার। এখানে ভাইয়ে ভাইয়ে ছোটখাটো সমস্যা থাকবেই। নারায়ণগঞ্জে আমরা সমাধান করেছি, কুমিল্লায়ও সমাধান করবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দলের কোন শাখার কেউ যদি অপরাধী হয়, শৃঙ্খলাবিরোধী কোন কাজ করে। তাহলে তাকে সরাসরি বহিস্কার করা যাবে না। বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করতে হবে এবং সেই সুপরিশ আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। এছাড়া কোন কমিটিও হুট করে ভেঙে দেয়া যাবে না। এ সুপরিশও কেন্দ্রীয় কমিটির সংশ্লিষ্ট যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে রিপোর্ট জমা দিবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ নেতারা রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কমিটি উত্থাপন করবে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গেও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণ থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির অংশ গ্রহণের সুযোগ সংবিধানে আছে কি না? সংবিধানে যদি না থাকে তাহলে আমরা কি করে সে সুযোগ দেব।’
খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না- বিএনপির এমন হুঁশিয়ারির জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তেমনি সংবিধান ও নির্বাচন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। কারো জন্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন যেমন থেমে থাকেনি। এবারও যদি কেউ নির্বাচনে না আসেন তাহলে নির্বাচন থেমে থাকবে না।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী কোনো দল পর পর দুইবার নির্বাচন বর্জন করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এ কারণে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবার ঝুঁকি বিএনপি নেবে বলে আমার মনে হয় না।’
নিবন্ধন আইনের অন্যতম শর্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা নিয়েও কথা বলেও ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমারা ক্রমান্বয়ে একে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাম্প্রতিককালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সুনামগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনেও নারীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য এসএম কামাল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, সাধারণ সম্পাদক পিনু খান, সহ-সভাপতি সাফিয়া বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক প্রমুখ।
Posted ০৮:৪৭ | শুক্রবার, ০৩ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain