| মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার,ঢাকা : গণমাধ্যমে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকতে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এজন্য তারা যৌথ বাহিনীর নামে পুলিশ-বিজিবি ও র্যাবের বিশেষ স্কোয়াড দিয়ে রাতের আঁধারে হত্যাযজ্ঞে নেমেছে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে এবং গণমাধ্যমে হামলা চালিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে ‘দৈনিক সংগ্রাম অফিসে উপর্যুপুরি গুলি ও বোমা হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। তারা প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসভবনেও পেট্রোল বোমা হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে হাইকোর্ট মোড় হয়ে পল্টন ঘুরে প্রেস ক্রাবে এসে শেষ হয়। এসময় সাংবাদিক-পেশাজীবীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে আশ-পাশের এলাকা।
সভাপতির বক্তৃতায় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণমাধ্যম বিরোধী এই সরকার একের পর এক গণমাধ্যমের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি এবং চ্যানেল ওয়ান বন্ধ, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে তিনি বলেন, নৌকায় ভর করে গণবাহিনীর এই প্রধান এখন গণমাধ্যমের ওপর হামলা চালিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এর জবাব একদিন তাকে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আর কত রক্তের প্রয়োজন আপনার? আপনি এসব রক্তের খেলা বন্ধ করে পদত্যাগ করুন। যারা রক্ত ঝড়াচ্ছেন সময় এলে তাদের খুজে বের করে বিচার করা হবে। এভাবে হত্যা চালিয়ে অতীতে কেউ রেহাই পায় নি। এ সরকারও পাবে না। এসময় তিনি বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে আজ বুধবার প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষনা দেন।
বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, সংগ্রাম অফিসসহ গত পাঁচ বছরে গণমাধ্যমে হামলার জন্য তথ্যমন্ত্রী ইনুই দায়ি। সময় এলে তদন্তের মাধ্যমে এসব হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুজে বের করে বিচারের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। এসময় তিনি মিডিয়ার ওপর হামলার বিচার দাবি করে বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানান।
সংগ্রাম অফিসে হামলা শেখ মুজিবের শাসনকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ করে ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, এ গণমাধ্যম ও ইসলাম বিরোধী এই সরকার শাহবাগীদের প্যাকেট প্যাকেট পোলাও-বিরানী খাইয়ে দিনের পর দিন নিরাপত্তা দিয়েছে আর ইসলাম ও নবী-রাসুলদের কটুক্তির প্রতিবাদ করায় শাপলা চত্বরে নিরীহ মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এসময় তিনি দেশে গুপ্তহত্যা চলছে অভিযোগ করে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব সদস্যদের সারা দেশে নিরীহ মানুষের ওপর গুলি বর্ষন বন্ধের দাবি জানান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকতে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার যৌথ বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে রাতের আঁধারে সারা দেশে নিরীহ মানুষদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে এবং গণমাধ্যমে হামলা চালিয়ে অতীতে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ইলিয়াস খান বলেন, সরকারের দু:শাসনের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইল বর্তমানে কারাগারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এসব করে ৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবের শেষ রক্ষা হয়নি, তার কন্যা শেখ হাসিনারও শেষ রক্ষা হবে না।
ডিইউজের দৈনিক সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএফইউজে সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, সহকারী মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল কবির ভুলু ও খন্দকার হাসানাত করিম পিন্টু, সাবেক সহ-সভাপতি ছড়াকার আবু ছালেহ ও খায়রুল বাশার, সাবেক সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারি সম্পাদক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফজলুল হক, ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ন সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডিইউজের যুগ্ন সম্পাদক শাহীন হাসনাত, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মুহাম্মদ, দপ্তর সম্পাদক শহীদ আবদুল গোফরান, ডিইউজের দৈনিক ইনকিলাবের ইউনিটের প্রধান ওমর ফারুক আল-হাদী, দিনকালের ইউনিট প্রধান সৈয়দ আকরাম, আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, দিগন্তের ইউনিট প্রধান ইমরান আনসারী প্রমুখ।
আজ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সমাবেশ ঃ বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে আজ বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সাংবাদিক ছাড়াও চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাবৃন্দ অংশ নিবেন।
Posted ২০:৫৯ | মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin