
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট
শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার দাউদকান্দি বালুর মাঠে ‘গণহত্যাকারী পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা কর্তৃক অবৈধ কর্মসূচির প্রতিবাদে ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মনে করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য এবং জনপ্রিয় দল। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেদেরকে শেষ করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা তার বাপকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করেছেন। রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমানের নানা ধরনের ছবি, ম্যুরাল, ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে শেখ হাসিনা এগুলো করেছেন। রাস্তাঘাটে ম্যুরাল করাতেই তো জনগণ এগুলো ভাঙতে পারল।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজে পদত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের যারা তার প্ররোচনায় দেশে লুটপাট করেছে, ব্যাংক লুট করেছে, টাকা পাচার করেছে এবং দেশের জনগণকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে, তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তাদের কী অবস্থা। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। আর অন্যরা হয় বিদেশে পালিয়ে গেছে না হয় দেশে আত্মগোপন করে আছে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্টের অভ্যুত্থান বিএনপির ১৬ বছর ধরে আন্দোলনের চূড়ান্ত একটি ফসল। সেই আন্দোলনে ১ হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে। আন্দোলনের সময় আমাদের দাউদকান্দিতে দুজনকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পর দেশে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থন জানিয়েছি। যাতে করে এই সরকার যে কারণে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে, সেই বিষয়গুলোর একটা সমাধান দিতে পারে সেজন্য সরকারও চেষ্টা করছে নানান সংস্কারের মাধ্যমে যে অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি গত ১৬ বছর ধরে যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে, আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে, গুম-খুন করেছে, তাদের এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। গত ৪ আগস্ট এবং ৫ আগস্ট দাউদকান্দিতে দুজন যুবককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের স্বজনরা মামলা করেছে। সেসব মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
জাতীয় ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজকে নানান ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কিন্তু এগুলো আশা করিনি। যারা পতিত সরকার, যারা ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচার ছিল তারা কিন্তু বিদেশে পালিয়ে গেছে, অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আছে। তারা আজকে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- আমরা বিগত ১৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশের শান্তির জন্য এবং শৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য আন্দোলন করেছি। আজকে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র, ফ্যাসিস্টদের নানান রকমের চক্রান্ত আমাদের দল ও অঙ্গসংগঠন এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করবে। এটার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে আমরা কথা বলেছি। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য, দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হবো। সেই ঐক্যের জন্য এখনো আমরা সকলকে আহ্বান জানাই।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে কীভাবে পরিচালনা করা হবে, শেখ হাসিনার আমলে যেসব দুর্নীতি হয়েছে, অন্যায় হয়েছে, লুট হয়েছে এগুলো যাতে বন্ধ করা যায় তার জন্য আজ থেকে দেড় বছর আগেই ক্ষমতায় গেলে কী কী সংস্কার করব- এগুলো আমরা প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। যে কোনো সময় নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করা হোক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা এই সরকারকে বলতে চাই- অনতিবিলম্বে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে তারা বাংলাদেশে নানারকম ষড়যন্ত্র করতে চেষ্টা করবে। সেটা এই সরকারের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে না।
দাউদকান্দি পৌরসভা বিএনপির সভাপতি নূর মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান, সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সিসহ উত্তর জেলা, দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১৫:১৭ | শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain