নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট
ধর্ম ডেস্ক : দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজা ফরজ ইবাদত। ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়া ও রোজা ভেঙে ফেলা কঠিন গুনাহের কাজ। যারা জীবনে অনেক ফরজ রোজা অবহেলা করে রাখেননি অথবা ভেঙে দিয়েছেন, অথবা দ্বীনের বুঝ না আসায় রোজার গুরুত্ব দেননি, তারা অতীতের রোজাগুলোর কাজা ও কাফফারা কাফফারা কীভাবে আদায় করবেন এর উত্তরে কয়েকটি অভিমত দেখা যায়। এর মধ্যে বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্যতার আলোকে ফুকাহায়ে কেরামের একটি অভিমত হলো- বিনা ওজরে যত রোজা ভেঙেছেন প্রত্যেকটির জন্য একটি করে কাজা আদায় করবেন।
আর সব রোজার জন্য একটি কাফফারার ৬০ রোজা আদায় করবেন। যেটি পেছনের সব রোজার জন্য যথেষ্ট হবে। প্রতিটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা আদায় করতে হবে না। তবে বিনা ওজরে রোজা ভাঙা অনেক বড় অন্যায়, এটা মনে রাখতে হবে। কেননা রমজানের রোজার যথাযথ ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সফর অথবা অসুস্থতা ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবেই রমজানের কোনো রোজা ভঙ্গ করবে সে আজীবন রোজা রাখলেও এর সত্যিকারের বদলা হবে না (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৮৯৩)
সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে, যেন সামনে এমন না হয়। আর পেছনের ভুলের জন্য কাজা-কাফফারার পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার করে নিতে হবে। (কিতাবুল আসল: ২/১৫৩; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/২৬০; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৭৭; আদ্দুররুর মুখতার: ২/৪১৩)
জীবনের সকল কাজা নামাজের কাফফারা হলো- আপনাকে সব ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ পড়তেই হবে। জীবনে না পড়া ফরজ নামাজের জন্য তাওবা করাও কোনো সমাধান নয়। বরং কাজাই আদায় করতে হবে। কেননা রাসুল (স.) বলেন- مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا، لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ ‘কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। কেননা, তার কাফফারা একমাত্র সেই নামাজই।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৪)
মুসলিম উম্মাহর সব বরেণ্য মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে তা কাজা করা আবশ্যক। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সব আলেম এ কথার ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন যে জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাজা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি: ১/১৭৮)
কাজা নামাজের হিসাব যেভাবে করবেন: আপনি বালেগ হওয়ার পর থেকে কোন ওয়াক্তের ফরজ নামাজ এবং বিতির নামাজ কী পরিমাণ ছুটেছে- প্রথমে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে একটি হিসাব বের করবেন। এরপর উক্ত নামাজগুলো কাজা আদায় করে নেবেন। কাজা আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন- ‘আমার জিম্মায় থাকা প্রথম ফজর (উদাহরণস্বরূপ) নামাজের কাজা পড়ছি’। এভাবে প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত করে এ কাজা নামাজগুলো পড়তে থাকবেন। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত এ নামাজগুলো কাজা করার কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা-ইস্তেগফার করবেন। (আততাজনিস ওয়াল মাজিদ: ২/৬৯; মুখতারাতুন নাওয়াজেল: ১/৩৪৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ-৪৯৪; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃ-২৪৩)
প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাজা আদায় করলেও সমস্যা নেই। এছাড়া সুবিধামতো যখন যে নামাজের কাজা আদায়ের সুযোগ হবে, তখনই তা আদায় করা যাবে। সুন্নত নামাজের কাজা নেই, কেবল ফরজ ও বিতিরের নামাজেরই কাজা আদায় করা যায়। (বুখারি: ৫৯৬; আল ইসতিজকার: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৬৮; ফতোয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৩২)
আর কাজা নামাজ আদায়ের আগেই মৃত্যু চলে আসলে কাজা নামাজগুলোর ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করা জরুরি। নামাজের ফিদিয়া হলো- প্রতিদিনকার কাজা করা বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতর এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৭২)
Posted ০৭:১৬ | বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain