নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট
অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর বাড্ডা এলাকার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিশুটিকে সুন্নতে খৎনা করার জন্য অজ্ঞান করার পর তার মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক এবং হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন, ‘এটা সিরিয়াস এলিগেশন।’
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন নথিভুক্ত করে এবং এই বিষয়ে রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। আগামী বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রুল শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, ‘রুল শুনানির সময় আমরা সব বিষয়ে শুনব। আমরা চাই, দেশের সকল মানুষের উপকার হয়।’
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান শুনানি করেন।
গত ২৫ জানুয়ারি আসা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুজন চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, শিশুটির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলো বন্ধ করার কথাও বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো—
-ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী হওয়ায়, হাসপাতালটি আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। ক্ষতিপূরণের কিছু অংশ আয়ানের পরিবারকে দেওয়া হবে এবং অন্য অংশ দিয়ে দুস্থ শিশুদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিশু আয়ানের মৃত্যুর জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
-চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবীন এবং অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সৈয়দ সাব্বির আহম্মদের বিরুদ্ধে বিএমডিসি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
-চিকিৎসা সংক্রান্ত লিখিত সম্মতিপত্রটি আরও স্পষ্টভাবে ও সহজভাবে বাংলায় লিখে, যাতে অভিভাবকরা সহজে পড়তে পারেন এবং বিষয়টি বুঝে সম্মতি দিতে পারেন। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি ‘ইউনিফর্ম’ বা একক ধরনের সম্মতিপত্র তৈরি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
-স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেগুলোকে বন্ধ করার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কিছু সুপারিশও করা হয়েছে—
-আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইনগুলোর সংস্কার ও পরিমার্জন করার সুপারিশ।
-রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসকদের উপরে রোগীকে বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানোর সুপারিশ।
-অপরিকল্পিত, মানহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।
-এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
-শুধুমাত্র বিএমডিসি নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার সুপারিশ।
-স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ ও সঠিক ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
-চিকিৎসকদের এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রণোদনা প্রদান এবং ভালো প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা উৎসাহিত করার সুপারিশ।
গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ইউনাইটেড হাসপাতালের এই ঘটনার তদন্তে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল, কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতের সন্তুষ্টি মেলেনি। নতুন কমিটি গঠন করা হয় যাতে তিনজন চিকিৎসক, দুইজন সিভিল সোসাইটির সদস্য এবং একজন অধ্যাপক থাকেন। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সোহওয়ার্দী হাসপাতালের অধ্যাপক ড. এ বি এম মাকসুদুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি, ইউনাইটেড হাসপাতালের শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট মন্তব্য করেছিল যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন ছিল ‘লোক দেখানো’ ও ‘হাস্যকর’।
Posted ০৭:৫৫ | মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain