বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম দিনেই ট্রাম্পের যতসব সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট

প্রথম দিনেই ট্রাম্পের যতসব সিদ্ধান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বহু পুরনো আইন বাতিল করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে এক নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার এসব সিদ্ধান্তে বাইডেন প্রশাসনের ধারা থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থায় ফেরানোর ইঙ্গিত রয়েছে। এসব পদক্ষেপের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বিশ্বব্যাপী পড়তে পারে।

 

৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। শপথের পর, তিনি দুই দফায় প্রায় ৫০টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। প্রথম দফায় তিনি ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনায় অভিষেক প্যারেডের পর এবং দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে এই আদেশগুলো জারি করেন।

ট্রাম্প অভিবাসন, পরিবেশ, সরকারি নিয়োগ এবং নাগরিকত্ব—সব বিষয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পরিবর্তন আনেন। বিশেষভাবে, তিনি ২০২১ সালের ক্যাপিটল হামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রায় ১,৬০০ জনকে ক্ষমা করেন। তার এই ঘোষণাগুলোর প্রভাব ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রতি প্রতিক্রিয়া আসছে।

 

ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে এসব পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিকভাবে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসেন। তার অভিষেক ভাষণে তিনি জানান, তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা শুরু হবে।

 

ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার দিনেই অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন। সে কথার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সোমবার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি চাইলে সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করতে পারবেন। এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ।

 

সংবিধানের তোয়াক্কা না করে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে, ৩০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা আর দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন না। এটি মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে যায়, যেখানে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবাই নাগরিকত্ব পাবে।

স্বাক্ষর করা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি বাইডেনের বিভিন্ন নীতি বাতিল করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—মাদক চক্রগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে, সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া সহজ করা, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়া ও সরকারি চাকরিজীবীদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ বন্ধ করা।

 

ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন, যা তার প্রথম মেয়াদেও করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরে এটি পুনর্বহাল করেন। এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘কী মনে হয়, বাইডেন এটা করতে পারতেন? আমার মনে হয় না।

 

ডব্লিউএইচও থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচও-কে সবচেয়ে বেশি অনুদান দেয়, যা মোট অনুদানের ১৮ শতাংশ। তবে ডব্লিউএইচও প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করবে।

 

প্রথম দিনের সিদ্ধান্তের মধ্যে পররাষ্ট্র দফতরের এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, বাইডেন প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া সহস্রাধিক ব্যক্তিকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেবেন নয়া এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।

 

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই খবরই আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলেছে এবং মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে মেক্সিকো সীমান্তকে জরুরি অঞ্চল ঘোষণার ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। সেই অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৮৮ হাজার মানুষকে নির্বাসিত করা হবে বলেও জানা গেছে।

 

এদিকে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও উত্থাপন করেছেন ট্রাম্প, যেখানে চীনের প্রভাব বাড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, চীন কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে। এছাড়া, কিউবার নাম যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী দেশগুলোর তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ আটকে দিয়েছেন।

 

ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের জনগণকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে তিনি আশাবাদী নন, যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

 

এছাড়া প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। তবে এই পদক্ষেপের প্রভাব সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। সূত্র: রয়টার্স

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:৩৫ | বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com