রায়হান আহমেদ সম্রাট | মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী, আইনজীবি ও সমাজসেবক সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মদ এর ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত। ১৯৭৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
এ উপলক্ষে ৩১ডিসেম্বর ২০২৪ ইংরেজি তারিখে ইটাখোলা (সাহেব বাড়ী) জামে মসজিদে খতমে কুরআন, খতমে আম্বিয়া, মিলাদ- ক্বিয়াম, মরহুমের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা, দোয়া- মোনাজাত, তাবারুক (শিন্নী) বিতরণ ও মরহুমের মাজার জিয়ারত সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দেশের এ কৃতি সন্তান ১৯৪৭ সনে পাকিস্তান হিন্দুস্তান বিভক্তির সময় সমগ্র সিলেট অঞ্চলকে পূর্ব পাকিস্তানে রাখার বিষয়ে অনুষ্ঠিত গণভোটে নিজের জীবন বাজি রেখে অংশ নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন এবং সফলতা অর্জন
করেন। ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চল আজ বাংলাদেশের অংশ হিসেবে পরিচিত। সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মদ পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের এমপি ও পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হিসেবে আইন বিচার ও স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি হাইকোর্টের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েও শহরের উন্নত জীবন এবং আরাম আয়েশ ত্যাগ করে নিজ গ্রাম নোয়াপাড়ায় থেকেই এলাকার জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তিনি তৎকালীন হবিগঞ্জ লোকাল বোর্ডের (বর্তমান জেলা পরিষদ) নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ১৭ বৎসর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে ৫ বৎসর তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য হিসেবে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তদানিন্তন সময়ে বে-সরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্টিত হবিগঞ্জ শহর বিদ্যুতায়নের জন্য স্থাপিত হবিগঞ্জ পিপলস ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর প্রতিষ্টাতা পরিচালক ছিলেন মরহুম সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মেদ। তিনি সর্ব প্রথম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে গ্রামাঞ্চল নোয়াপাড়ায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন এবং এলাকায় বিদ্যুতায়ন করেন। মাধবপুরের অবকাঠামো তথা রাস্তাঘাট ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মরহুম সৈয়দ সঈদ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ইটাখোলা ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা ও আজীবন সভাপতি ছিলেন। সৈয়দ সঈদ উদ্দিন আহম্মেদের স্বপ্ন ছিল বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষে এলাকায় শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে তুলে দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। সেই লক্ষে জীবদ্দশায় তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। মরহুম সৈয়দ সঈদ আহম্মেদ ছিলেন মাধবপুরের নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্টাতা এবং প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি নোয়াপাড়া রেলওয়ে ষ্টেশন, নোয়াপাড়া হাসপাতাল, আই বি স্কুল, ইটাখোলা ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সভাপতি ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক জীবন ধারায় অভ্যস্থ মরহুম সৈয়দ উদ্দীন আহম্মেদ পাকিস্তান আমলে লাখাই ও বামৈ এ পবিত্র ঈদের দিন হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ১৯৪৭ এ সংগঠিত দাঙ্গা নিষ্পত্তির জন্য স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত সমাজ সেবক সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মদ খোয়াই নদীর বাইপাস নির্মাণ ও চুনারুঘাটে খোয়াই নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের কথা সংসদে জোড়ালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি মাধবপুর থানা উন্নয়ন কেন্দ্র যা বর্তমানে ইউএনও অফিস ও মাধবপুর থানা সদরে হাসপাতাল কমপেক্স স্থাপন করার পাশাপাশি বাহুবল থানা সদরে সাব রেজিষ্ট্রার অফিস স্থাপনেও অবদান রাখেন। সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মদের উত্তরসূরীরা তাঁর লালিত স্বপ্ন হিসেবে মাধবপুরে গড়ে তুলেন সৈয়দ সঈদ উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ, নোয়াপাড়া সৈয়দ সঈদ উদ্দীন হাইস্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দ সফি উদ্দীন কুতুবুন্নেছা এতিমখানা, আলহাজ্জাহ ইয়াসমীন ফয়সল হাফিজিয়া মাদ্রাসা, আলহাজ্ব এস এম ফয়সল ফুরকানীয়া মাদ্রাসা, আলহাজ্ব এস এম ফয়সল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ অনেক প্রাইমারী স্কুলসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্টান। তাছাড়াও তাঁর উত্তরসূরীদের প্রচেষ্টায় সায়হামনগর সাবপোষ্ট অফিস, মাধবপুরের অনেক গ্রামে গ্যাস সংযোগ স্থাপনসহ অনেক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্টান গড়ে উঠে। তাদের আর্থিক সহযোগীতায় মাধবপুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে অনেক মসজিদ সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তারা মাধবপুর থানায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সায়হাম গ্রুপের সৌজন্যে প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা শিবিরে হবিগঞ্জ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বি-বাড়িয়া জেলার হাজার হাজার চক্ষুরোগী উপকৃত হচ্ছে। এছাড়াও সায়হাম গ্রুপের সৌজন্যে প্রতি বছর মাধবপুর উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে এস এম ফয়সল মৃধাবৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতি বছর মাহে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, মাধবপুর, চুনারুঘাট, নাসিরনগর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গরীব অসহায় নারী- পুরুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়া এলাকার যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সায়হাম গ্রুপ দূর্গত মানুষের সহযোগীতায় এগিয়ে আসে। প্রতি বছর রমজানে মাধবপুরের সকল মসজিদে রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন করার পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে এলাকার দরিদ্র লোকদের আর্থিকভাবেও সাহায্য করা হয় সায়হাম গ্রুপের পক্ষ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে সুন্দর ভাবে পূজা সম্পন্নের জন্য আর্থিক অনুদানও দেওয়া হয়। মরহুম সৈয়দ সঈদ উদ্দীন আহম্মেদ এর উত্তরসূরীদের প্রচেষ্টায় পল্লীগ্রাম নোয়াপাড়া আজ শিল্প নগরীতে পরিণত হয়েছে। যা আজ সায়হামনগর হিসেবে পরিচিত। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নোয়াপাড়ায় গড়ে উঠেছে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (ইউনিট-১), সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (ইউনিট-২), সায়হাম কটন মিলস লিমিটেড (ইউনিট-১), সায়হাম কটন মিলস লিমিটেড (ইউনিট-২), ফয়সল স্পিনিং মিলস লিমিটেড (ইউনিট-১), ফয়সল স্পিনিং মিলস লিমিটেড (ইউনিট-২), ফয়সল স্পিনিং মিলস লিঃ (ইউনিট-৩), সায়হাম ডেনিম মিলস লিমিটেড, সায়হাম নীট কম্পোজিট লিমিটেড, সফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সায়হাম মাল্টিফাইবার মিলস লিমিটেড এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানীমূখী এসব শিল্প প্রতিষ্টানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আয় হচ্ছে প্রচুর
বৈদেশিক মুদ্রা এবং সরকারও পাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।”
Posted ১৬:১০ | মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Samrat Ahmed