শনিবার ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

তথ্য গোপন করায় ইউনূস সরকারের চাপের মুখে আদানি: রয়টার্সের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট

তথ্য গোপন করায় ইউনূস সরকারের চাপের মুখে আদানি: রয়টার্সের প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক :বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ওই চুক্তির আওতায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত সরকারের থেকে কর সুবিধা পেলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই সুবিধা দেয়নি আদানি। বরং গোপন করে গেছে সেই সুবিধা পাওয়ার তথ্যও।

 

পূর্ব ভারতের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিটি বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের নথি এবং দুই পক্ষের মধ্যে চালাচালি হওয়া চিঠিপত্র অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই এ চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন।

 

চুক্তিটিও বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তাই এ বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে ফের দরকষাকষি করতে চায় ঢাকা।

 

২০২৩ সালের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও আদানি পাওয়ারের বিল পুরোটা পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ।

 

ইতোমধ্যে সরবরাহ করা বিদ্যুতের বিল বাবদ বাংলাদেশের কাছে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে আদানির। তবে পাওনার সঠিক অঙ্ক নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ রয়েছে।

 

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, আদানি ছাড়াই স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না থাকলেও স্থানীয় উৎপাদনই পর্যাপ্ত।

 

রয়টার্স জানায়, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল বিদ্যুৎ চুক্তির সঙ্গে ছিল আরেকটি বাড়তি বাস্তবায়ন চুক্তি। সেই চুক্তিতে কর সুবিধা হস্তান্তর বা ভাগাভাগির শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

 

বাংলাদেশ এখন ২৫ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রসিকিউটররা আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে যে মামলা করেছেন, তা কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটিকে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে চাপ দিতে পারবে বলে আশা করছে ঢাকা।

 

যদিও বাংলাদেশে আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে আদানির এক মুখপাত্র বলেন, কোম্পানিটি সব চুক্তিগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। ঢাকা চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি। কর সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোম্পানিটি সেসবের উত্তর দেয়নি।

 

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে আদানি বলছে, প্রকল্পটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ সালে দিল্লি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা দেয়। এর ফলে কেন্দ্রটি আয়কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য কর সুবিধা পায়।

 

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ার ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তি এবং বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর-সংক্রান্ত সুবিধার পরিবর্তন দ্রুত বাংলাদেশকে জানানোর এবং সেই সুবিধা বাংলাদেশকেও দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল আদানি পাওয়ারের।

 

কিন্তু এ সুবিধার কথা জানানো কিংবা সুবিধা ভাগাভাগি— কোনোটিই করেনি আদানি পাওয়ার। ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পাঠানো চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। চিঠিগুলোর কপি রয়টার্সের হাতে রয়েছে। ওই চিঠিগুলোতে বাংলাদেশকে এসব সুবিধা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে কোম্পানিটিকে।

 

মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে বিপিডিবির দুইজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, তারা আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। ওই কর্মকর্তারা জানান, বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, কর সুবিধা হস্তান্তর করা হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ০.৩৫ সেন্ট ব্যয় সাশ্রয় হতো।

রয়টার্সের দেখা বাংলাদেশ সরকারের একটি নথির তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এই হিসাবে বাংলাদেশের মোট সাশ্রয় হতে পারত প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, ভবিষ্যতে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় ব্যয় সাশ্রয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে।

 

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আদানির কোম্পানির সঙ্গে নাইরোবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড সংস্কারের আকর্ষণীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

 

এর কয়েকদিন পর ইউরোপের বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি টোটালএনার্জিস ঘোষণা দেয়, তারা আর আদানির প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে না। এখন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা—যেখানে ভারত ও চীন প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা লিপ্ত—আদানির সঙ্গে তাদের বিভিন্ন চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে। কিছুদিন আগে নিউইউর্ক টাইমসও এমন খবর জানায়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৪:২০ | শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com