শনিবার ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

যেমন কেটেছে স্বৈরশাসক আসাদের শেষ কয়েক ঘণ্টা, পালালেন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট

যেমন কেটেছে স্বৈরশাসক আসাদের শেষ কয়েক ঘণ্টা, পালালেন যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক : দুই যুগের বাশার আল আসাদ শাসনের অবসান হয়েছে। সিরিয়া এখন বিদ্রোহীদের দখলে। আসাদ রাশিয়ার আশ্রয়ে আছেন। তবে পালানোর আগে আসাদের শেষ সময়টুকু সিরিয়ায় কেমন কেটেছে সেই খবর তুলে এনেছে ব্রিটিশ সংবাদ রয়টার্স।

 

ঘটনাটি সম্পর্কে জানাশোনা এক ডজনের বেশি ব্যক্তির সাথে রয়টার্স কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, দেশত্যাগের আগের দিনও আসাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে দেশটির প্রায় ৩০ সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কমান্ডার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, রুশ বাহিনী তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে।

তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসাদ যে সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাবেন, সেটা বৈঠকে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেননি। বেসামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা।

 

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তরে প্রাত্যহিক কাজ সেরে সেখানকার কর্মকর্তাদের আসাদ বলেছিলেন, তিনি বাসায় ফিরবেন। কিন্তু তা না করে বিমানবন্দরে চলে যান বলে জানান তার ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী।

 

আসাদের গণমাধ্যম উপদেষ্টা ছিলেন বুথাইনা শাবান। আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে তাকেও নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তার জন্য একটি ভাষণ লিখতে হবে। বুথাইনা জানান, তিনি যখন আসাদের বাড়িতে পৌঁছান, তখন সেখানে অন্য কেউ ছিলেন না।

 

আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরব রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক নাদিম হউরি বলেন, আসাদ শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। সেনাদের জড়ো করতে পারেননি। সমর্থকদের নিজ নিজ ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন তিনি।

 

মস্কোয় রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। তবে একেবারে শেষ সময় তার আশপাশে থাকা অন্তত ১৪ ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের কেউই নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তারা আসাদের সিরিয়া ছাড়ার আগমুহূর্তের ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন।

 

অন্তত তিনটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসাদ যে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাবেন, সেটা তিনি তার ছোটভাই মাহেরকেও জানাননি। মাহের সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অভিজাত চতুর্থ সশস্ত্র ডিভিশনের কমান্ডার ছিলেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, দামেস্কের পতনের পরপর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে ইরাকে যান মাহের। সেখান থেকে রাশিয়া চলে যান।

 

সিরিয়ার সহযোগী ও লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বাশার আল-আসাদ তার দুই মামাতো ভাই এহাব আর ইয়াদ মাখলৌফকে বিদ্রোহীদের ধেয়ে আসার মুখে দামেস্কে ফেলে চলে যান। পরে এ দুই ভাই একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে লেবানন সীমান্তের দিকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হন এহাব। আহত হন ইয়াদ। তবে এ বিষয়ে কোনোপক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

 

আসাদ নিজেও রবিবার ভোরে একটি উড়োজাহাজে দামেস্ক থেকে উড়াল দেন। বিদ্রোহীরা যখন রাজধানীতে ঢুকে পড়েন, তখন তিনি এমনভাবে দেশ ছাড়েন যে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজকে রাডারে শনাক্ত করা যায়নি।

 

এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের টানা ৫৩ বছরের শাসনের অবসান হয়। বাশার আল-আসাদ ২৪ বছর আর এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ ২৯ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বাশারের আমলের শেষ ১৩ বছর গৃহযুদ্ধ জর্জরিত হয়েছে সিরিয়া।

 

দামেস্ক ছেড়ে আসাদ শুরুতে সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় রাশিয়ার হেমেইমিম বিমানঘাঁটিতে যান বলে সূত্র জানিয়েছে। সেখান থেকে তাকে মস্কোয় উড়িয়ে নেওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে স্ত্রী আসমা আসাদ ও তাদের তিন সন্তান তার অপেক্ষায় ছিলেন।

 

তিনটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের আলেপ্পো প্রদেশে হামলা শুরুর একদিন পর গত ২৮ নভেম্বর মস্কোয় গিয়েছিলেন বাশার আল আসাদ। তিনি রাশিয়ার কাছে সামরিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানান, চান সহায়তা। তবে সামরিক হস্তক্ষেপে আগ্রহী ছিল না মস্কো।

 

বিদেশে অবস্থানরত সিরিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা হাদি আল-বাহরা বলেন, রাশিয়া থেকে ব্যর্থ মনোরথে দেশে ফেরেন আসাদ। তবে ঘনিষ্ঠজনদের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে দেননি। তিনি বলেন, বাশার আল-আসাদ মস্কো থেকে নেতিবাচক বার্তা নিয়ে ফিরেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কমান্ডার ও সহযোগীদের বরাবরই বলেছেন, রাশিয়া থেকে সামরিক সহায়তা আসবে। তিনি মিথ্যা বলেছিলেন।

 

আসাদের মস্কো সফরের চার দিন পর ২ ডিসেম্বর দামেস্কে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ততদিনে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। সরকারি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ায় বিদ্রোহীরা আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতেও শুরু করেন।

 

ইরানের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানান, ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আসাদকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধে পিছু হটার ঘটনাগুলোয় তিনি মর্মাহত।

 

তবে আসাদ কখনোই চাননি যে ইরানের সেনাদের সিরিয়ায় মোতায়েন করা হোক। তিনি ভাবতেন, এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইরানের সেনাদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর সুযোগ পেয়ে যাবে ইসরায়েল। এমনকি এ সুযোগে ইরানেও হামলা চালাতে পারে দেশটি। ইরানের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন।

 

পরিস্থিতি সব দিক থেকে যখন মুঠোর বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন পিছু হটেন আসাদ। ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন। নিরাপদ প্রস্থানের উপায় খুঁজতে থাকেন। আসাদের ঘনিষ্ঠ তিন সূত্র জানায়, আলেপ্পো ও হোমস শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিদ্রোহীরা যখন দামেস্কের দিকে এগিয়ে আসছিলেন, তখন সিরিয়া ছেড়ে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন আসাদ।

 

সূত্র জানায়, বাশার আল–আসাদের সেই ইচ্ছা নাকচ করে দেয় আরব আমিরাত সরকার। যুক্তি ছিল, বিদ্রোহ দমাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জেরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কাউকে আশ্রয় দেবে না দেশটি।

 

সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপে রাশিয়ার আগ্রহ না থাকলেও দেশটি দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাশার আল আসাদকে পরিত্যাগ করেনি। একটি রুশ কূটনৈতিক সূত্র নাম গোপন রাখার শর্তে একথা জানান।

 

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ৭ ও ৮ ডিসেম্বর কাতারে দোহা ফোরামে অংশ নেন। তার নেতৃত্বে আসাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক উদ্যোগ চালু রেখেছিল রাশিয়া। সে সময় তুরস্ক-কাতার বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ক্ষমতা ছেড়ে আসাদের নিরাপদে বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলেছে বলে জানান দুজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা।

 

পশ্চিমা একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, সিরিয়া থেকে আসাদের নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়ে ল্যাভরভ তার পক্ষে ‘যা করার সবটাই’ করেছেন।

 

তিনটি সূত্রে জানা গেছে, সিরিয়া থেকে আসাদকে নিয়ে মস্কোর পথে উড়াল দেওয়া উড়োজাহাজটি যাতে হামলার লক্ষ্যবস্তু না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করেছে রাশিয়া।

এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।

আর তুরস্কের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজের জন্য তুরস্কের কাছে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুরোধ জানায়নি রাশিয়া। তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তুরস্কের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৪৪ | সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com