বুধবার ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

জান্নাতে নারী কি তার স্বামীকে হুরদের কাছ থেকে আলাদা রাখতে পারবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট

জান্নাতে নারী কি তার স্বামীকে হুরদের কাছ থেকে আলাদা রাখতে পারবে?

জান্নাত মুমিন নারী-পুরুষের স্থায়ী ঠিকানা। নেক আমলের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের জান্নাত পুরস্কার দেবেন। জান্নাত চিরস্থায়ী ভোগ-বিলাসের স্থান। যেখানে মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই, বার্ধক্য নেই। জান্নাতের সুশীতল ছায়া, আপ্যায়ন, পানীয়, চক্ষু শীতলকারী নারীসঙ্গী, পরিবেশকগণ, বহুতলবিশিষ্ট সুউচ্চ মনোরম প্রাসাদ, বাগান, ঝর্ণা, জান্নাতিদের প্রতি অভিবাদন এবং সবকিছুর ওপরে আল্লাহর সন্তুষ্টি—সকল নেয়ামতে পরিপূর্ণ থাকবেন জান্নাতিরা।

 

জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)

জান্নাতে পুরুষের জন্য একটি নেয়ামত হলো হুর। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আছে সাফল্য, প্রাচীর বেষ্টিত বাগান, আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা।’ (সুরা নাবা: ৩১-৩৩) তারা হবেন জান্নাতি পুরুষের সমবয়সী। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তাদের করেছি কুমারি, সোহাগিনী, সমবয়ষ্কা।’ (সূরা ওয়াকেয়া: ৩৬-৩৭)

 

হুররা দেখতে এতই সুন্দরী হবেন যে, ‘যাদের গোশতের ওপর দিয়ে তাদের পায়ের গোছার ভেতরের মগজ দেখা যাবে।’ (মুসলিম: ২৮৩৪) হুরদের কাজ হবে স্বামীর মনোরঞ্জন করা। তারা আর কোনো কাজে তারা লিপ্ত হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার ওপরে।’(সুরা আর রহমান: ৭৬)

 

হুররা হবে সুরক্ষিত কুমারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা হুর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।…তাদের এর আগে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি। (সুরা আর রহমান: ৭২ ও ৭৪) তাদের শরীর থেকে ঘ্রাণ ছড়াবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জান্নাতি কোনো নারী যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু চেয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারি: ২৭৯৬)

 

তবে, জান্নাতে হুরদের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী হবেন জান্নাতি মুমিন নারীরা। তাঁদের হুরের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হবে। তাঁরা বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও জান্নাতে তাঁরা যুবতি হয়ে যাবেন। দুনিয়ায় যেমনই থাকুন, আখেরাতে অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী (স.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বলেন, ওহে! কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। নবী (স.) বলেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী।’ (সুরা ওয়াকেয়া: ৩৫-৩৬; শামায়েলে তিরমিজি: ১৭৯)

 

জান্নাতি নারীদের দেহ হবে প্রোজ্জ্বল। তাদের দেহ থেকে মূল্যবান রত্নের মতো দ্যুতি ছড়াতে থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন পদ্মরাগ ও প্রবাল।’ (সুরা আর রহমান: ৫৮)

 

জান্নাতি নারীদের দুনিয়ার স্বামী যদি জান্নাতি হন, তবে তাঁকেই স্বামী হিসেবে পাবেন, তবে সেখানে সেই স্বামীর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে না, যা দেখে নারীদের আফসোস হতে পারে। কোনো নারীর যদি একাধিক বিয়ে হয়, তাহলে তাঁর শেষ স্বামী জান্নাতে তাঁর স্বামী হবেন। হাদিসে এসেছে, হুজায়ফা (রা.) তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যদি তোমাকে এই বিষয়টি আনন্দিত করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে, তাহলে আমার পর আর বিয়ে করো না। কেননা জান্নাতে নারী তার দুনিয়ার সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে থাকবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা তাঁরা জান্নাতে তাঁরই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ (বায়হাকি, সুনানে কুবরা: ১৩৮০৩)

 

জান্নাতে স্বামীকে হুরদের কাছ থেকে আলাদা রাখা যাবে কি না জানতে চান অনেকে। এর উত্তর হলো- অবশ্যই আলাদা রাখতে পারবে। কিন্তু জান্নাতি পরিবেশে হুরদেরকে আলাদা করার মানসিকতা কারো মধ্যে থাকবে না। কোনো ঈর্ষা থাকবে না জান্নাতিদের অন্তরে। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, জান্নাতে হুরদের রানি হবেন দুনিয়ার স্ত্রী। জান্নাতি এই স্ত্রীদের নিজেদের মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ঝামেলা থাকবে না। কারণ মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে মানুষকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র করে নেবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭)

 

এখানে আয়াতের দ্বারা শুধু পুরুষ উদ্দেশ্য নয়, বরং সব জান্নাতি উদ্দেশ্য। জান্নাতের নারীরা চরিত্রের দিক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হবেন, তাঁদের মনে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। তাঁরা কখনো অন্যের স্বামীর দিকে দৃষ্টিও দেবেন না। জান্নাতে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের মায়া ও ভালোবাসা থাকবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুতু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না, মলমূত্র ত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের; তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মতো সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে। (বুখারি: ৩২৪৫)

 

বিয়ের আগে মৃত্যুবরণ করা জান্নাতি নারীকে জান্নাতে দুনিয়ার এমন একজন পুরুষ অথবা এমন একজন অবিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন, যা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যাবে। কেননা জান্নাতের নিয়ামত ও সুখসম্ভার শুধু পুরুষের জন্য নয়, বরং তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য। আর জান্নাতের একটি নিয়ামত হচ্ছে বিয়ে। (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন: ২/৩৮)

 

আর কোনো নারীর স্বামী যদি জাহান্নামি হয়, তখন সে জান্নাতে প্রবেশের পর সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবে, যারা বিয়ে করেনি অথবা বিয়ে করেছে; কিন্তু তাদের স্ত্রী জাহান্নামি। তাদের থেকে পছন্দমাফিক একজনকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারবে। (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন: ২/৩৮)

সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:৫৬ | বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com