নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে এক অদ্ভুত শাসন বিরাজমান। এটি এমন এক দুঃশাসন যেখানে এক ব্যক্তির ইচ্ছায় আদালতের কার্যক্রম চলে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখানে ন্যায়বিচার, বিধিবদ্ধ আইনী প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ হয় না। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও এবং আর কোনো মামলা দায়ের না করার উচ্চ আদালতের নির্দেশনার সত্ত্বেও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ইতোপূর্বে নানাভাবে তাকে আটকিয়ে রাখার যে বেআইনী কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ করা হয়েছে তা নজীরবিহীন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ব্যাক ডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় মুন্নাকে আটকিয়ে রাখার পর আবারও উচ্চ আদালতে রীট করলে তাকে মুক্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেল কতৃর্পক্ষ সম্পূর্ণরুপে নীরব। আব্দুল মোনায়েম মুন্না এ মূহুর্তে সকল মামলা থেকে জামিনপ্রাপ্ত। অথচ তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না জেল কতৃর্পক্ষ। তারা বলছে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছ থেকে মুক্তির নির্দেশনা না পেলে মুন্নাকে ছাড়বে না। এই ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ দেশে মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের স্বাধীনতা, কন্ঠের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা এখন শেখ হাসিনার আঁচলবন্দী।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে তরুণদের যে ঢল নেমেছে তাতে স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ায় বিহব্বল শেখ হাসিনা। নতুন নতুন মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের প্রবাহ আটকে নেই। কারাবন্দী নেতাদেরকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে রাখার জন্য প্রহসনের আইনী প্রক্রিয়াও তারা আর অবলম্বন করছেন না। এখন গায়ের জোরেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। গ্রেফতারসহ রিমান্ডের নামে উৎপীড়ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালের লিখন হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও নীতিকে সমাধিস্থ করে নব্য বাকশালী কতৃর্ত্ববাদের নতুন আদর্শ, নতুন ভাবধারা, নতুন রুচি ও নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা প্রতি মূহুর্তেই অবলোকন করছি। যেমন উচ্চ আদালতের বিচারপতি বলেন, ‘আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’। গণতন্ত্রের মহান আদর্শ, জীবনের মহান সত্যের পদধ্বনি ওরা শুনতে পাচ্ছে না। ওরা শুধুই পচা, গলিত একদলীয় নব্য বাকশালের কদর্যতা, তুচ্ছতা, হীনতা ও নীচতার হিংস্র দুঃশাসন কায়েম রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তাই বর্তমানে দেশব্যাপী আবারও একতরফা নির্বাচন করতে পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসকের পৈশাচিক প্রবৃত্তির লীলাকেন্দ্র।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা দ্ব্যর্থকন্ঠে বলতে চাই—ফ্যাসিবাদ, মানবসভ্যতা ও মানব সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের পথে প্রধান বাধা। মূলতঃ এরা আদিম অরণ্যের অন্ধকারকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তবে বলে রাখি—জনগণ কিন্তু গভীর নিদ্রায় অচেতন নয়। গণতন্ত্রের নবজাগরণের স্বরুপ ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের নতুন যুগের জয়যাত্রার পথে ফ্যাসিবাদের ব্যারিকেড ভেঙ্গেচুরে প্রতিষ্ঠিত হবে জনগণের মালিকানা। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত হবে এবং দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।
রিজভী অবিলম্বে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, হাবিবুল ইসলামা হাবিব, সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, শেখ রবিউল আলম রবি, তানভীর আহমেদ রবিন, এস এম জাহাঙ্গীর, আলী আকবর চুন্নু, গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুফ বিন জলিল কালু, মুসাব্বির আহমেদসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১১:১৯ | মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain