ডেস্ক রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগে তুলে ধরে এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বললেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী নেতারা।
বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে গতকাল নজিরবিহীন ঘটেছে, যা চলমান। আজও আমাদের রুমে তালা লাগানো আছে, অনেকের রুমের চারপাশে পুলিশ দেওয়া হয়েছে। এই অঙ্গনে এটা কি অনুমোদিত? তারা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্যাতন করেছে। আমরা সুরক্ষা চাইছি।
এরপর বিএনপি প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির আদালতে বলেন, ‘আপনারা দেশের বিচার বিভাগের অভিভাবক। তাই আমাদের প্রত্যেকের ব্যথা, কষ্ট অভিভাবক হিসেবে অবহিত করা উচিত। সমিতির নির্বাচন হয় সব সময় উৎসবমুখর। তবে এবার কী হলো? আজও আমি রুমে ঢুকতে পারিনি। রুমের বাইরে থেকে তালা লাগানো। কক্ষের সামনে পুলিশ রয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিককে আহত করা হয়েছেন। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেছে সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান কমিটির ছয়জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।’
একপর্যায়ে এই নির্বাচনের সভাপতি পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটকেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ ঢুকে ধাক্কা দিতে থাকে। সবাই পড়ে যাচ্ছিল আর পুলিশ পা দিয়ে পাড়িয়েছে। আমার পায়ে ব্যথা। আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না। অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিককে আহত করা হয়েছে।’
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ১১টার সময় তার খাস কামরায় এবিষয়ে কথা বলতে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী বিএনপির এই আইনজীবী নেতারা ১১ টায় প্রধান বিচারপতির কক্ষে থাকা আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিদের উপস্তিতিতে কথা বলেন। সেখানে গতকালের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এই দুই আইনজীবী নেতা জানান প্রধান বিচারপতি বলেছেন তিনি এবিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথেও কথা বলবেন।
এর আগে নজিরবিহীন নিরাপত্তা আর দুই পক্ষের আইনজীবীদের হইচই-হট্টগোলের পাশাপাশি পুলিশের সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা দিয়ে শেষ হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিন ব্যাপি নির্বাচনের প্রথম দিন।
১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল হতে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে গত ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়। কিন্তু সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এই পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মোঃ মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। সেই সাথে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
পরদিন বুধবার নির্বাচনের প্রথম দিন সকাল ৭টা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে ছিল শত শত পুলিশের উপস্থিতি। এছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। একপর্যায়ে এদিন বেলা বেলা ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোটকেন্দ্র) ভেতরে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হইচই-হট্টগোলের মাঝেই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এতে প্রায় এক ডজন সাংবাদিক আহত হন। সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ঘটনায় মর্মাহত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অন্যদিকে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এইবন্যক্কার জনক হামলা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ল’রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
এদিকে গতকাল নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হওয়া এই নির্বাচনে ২২১৭ ভোট পড়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। অন্যদিকে, গতকালের ভোটকে ‘অবৈধ ভোটগ্রহণ’ দাবি করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৬০২ জন আইনজীবী। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত সাত প্রার্থী হলেন— মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে অ্যাডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
Posted ০৯:০৮ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin