বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

মোংলায় পশুর চ্যানেলের ডেজিং প্রকল্পের বালু ভরাট নিয়ে উত্তেজনাঃপুলিশ মোতায়েন

  |   বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট

মোংলায় পশুর চ্যানেলের ডেজিং প্রকল্পের  বালু ভরাট নিয়ে উত্তেজনাঃপুলিশ মোতায়েন

আমির হোসেন আমু, মোংলা থেকে :

মোংলা বন্দরে প্রায় ৮ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের চলমান ইনার বার ড্রেজিং  প্রকল্প নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নদী থেকে উত্তেলিত বালু নিয়ম ভঙ্গ করে অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমিতে ফেলায় সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

মোংলার পশুর নদীর তীরের চিলা ইউনিয়নের জমির মালিকদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী চায়না প্রতিষ্ঠান নিয়ম নীতিকে কোন তোয়াক্কা না করে বালু ফেলার নামে মারাত্মক পরিবেশ দুষণ ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া জমির মালিকদের এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতি পূরণ না দিয়ে নানা তালবাহানা করছে। এ দিকে, কৃষি জমিতে ড্রেজিংয়ের বালু ফেলা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সেখানে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ইস্যুতে জমির মালিকরা বালু ফেলার প্রতিবাদ করা ও বাঁধা দেওয়ায় সেখানে কথিত হামলার অভিযোগে বন্দরের পক্ষ থেকে জমির মালিকদের নামে থানায় মামলা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জমির মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।

 

বন্দর সূত্র জানায়, দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আগামন-নির্গমনে চ্যানেল সচল রাখতে পশুর নদীতে ৭শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ইনার বার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। চীনা কোম্পানী “জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি” ঠিকাদার হিসেবে পশুর চ্যানেল খননের কাজটি শুরু করে। গত ১৩ মার্চ এ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

 

পশুর নদীর তীরবর্তী মোংলা উপজেলার ৬নং চিলা ইউনিয়নের ১১ নং চিলা মৌজার  ব্যক্তিমালিকানাধীন ৭শ’ একর ও দাকোপের পশুর নদী সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকের প্রায় ৩ শ” একর জমি ড্রেজিং এর মাটি ফেলার জন্য হুকুম দখল করে। মোংলার এই ৭ শ’ একর জমির মধ্যে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্রয়কৃত জমি রয়েছে প্রায় ৩ শ’ ৮৫ একর। শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে থাকা এসব জমির বেশীরভাগের মালিক হচ্ছে মেসার্স ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ।

 

হুকুম দখলে নেয়া এসব জমির মালিকদের না জানিয়ে হঠাৎ করে বন্দর কর্তৃপরে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও চায়না কোম্পানীর লোকজন জোর পুর্বক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভেরীবাধ নির্মাণ শেষে বালু ভরাটের কাজ শুরু করে দেয়। যেসকল জমিতে মৎস্য চাষ চলা অবস্থায় তাদের সেই ঘেরের মধ্যে বালু ভরাট করে ব্যাপক ক্ষতি করেছে তারা। এছাড়াও মাছের ঘেরের মধ্যে এখন চলছে ধান চাষ, সেই ধান চাষের ভিতরে বালু ফেলে ধান ও মাছ বিনষ্ট করে ফেলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

যে সকল জমিতে বালু ভরাট করে ফেলছে যেমন, গ্রামবাসীর মৎস্য ঘের, বসত বাড়ী ও কৃষি জমি, সে সকল জমির অধিগ্রহণ করা ছাড়াই এবং ওই জমির মালিকদের অনুকুলে কোন ক্ষতিপুরণ পরিশোধ না করে অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক মৎস্য ঘেরে পানি অপসারণ করে মাটি কেঁটে তাতে ডাইক নির্মাণ করে বালু ভরাট করছে বলে গ্রামবাসীর দাবি। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের লিখিত নিয়মানুযায়ী রাস্তার লেভেল থেকে যেখানে ৬ ফুট উচু করার কথা থাকলেও সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উচু করে মাটি ভরাট করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এভাবে উচু করে জমিতে মাটি বা বালু ফেললে আগামী ১০০ বছরেও উক্ত জমিতে কোন প্রকার ফসল ফলানো সম্ভব হবে না এবং এলাকায় বসবাস করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে দাবি এলাকাবাসীর অনেকেরই।

 

এদিকে কৃষি জমিতে বালু ভরাটের শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের ফলে গত ৩০ আগষ্ট জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে অসহায় মানুষদের ক্ষতিপুরণ দিয়ে কৃষি জমিতে বালু ফেলার নির্দেশনা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ এর মালিকানাধীন জমির প্রতিনিধি মো. লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন মালিক বন্দর ও ড্রেজিং কোম্পানীর লোকজনকে ক্ষতিপুরন না দিয়ে বালু না ফেরার জন্য অনুরোধ জানায়। সেখানে কিছু সময় কাজ বন্ধ রেখে রাতের অন্ধকারে তিনটি ড্রেজার চালু করে সমুদয় জমিতে বালু দিয়ে ভরাট করে দেয়।

 

কিন্ত জেলা প্রশাসক ও মালিকদের এ নির্দেশনা অমান্য করে বালু ডাম্পিংয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় জমির মালিকারা প্রতিবাদ জানালে ১৩ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর সাথে সাজানো হামলা মারামারি ঘটনা ঘটে। এতে লুৎফর রহমানসহ বেসরকারি শিল্প প্রািতষ্ঠানের মালিকানা জমির ৫ প্রতিনিধিকে চিহ্নিত করে অজ্ঞাতনামা প্রায় ১৫ জনের নামে ওই দিন রাতে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও সে মামলায় কিছু দিন পালাতক থাকার পর হাইকোর্ট থেকে আসামিরা জামিন নিয়েছেন। মামলার পর ৩/৪ দিন ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ রাখলেও পুনরায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালু ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

 

এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী চায়না প্রতিষ্ঠানের নিয়ম বহির্ভূত বালু ভরাট ও ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এ রিটের প্রেক্ষিতে আদালত সংশ্লিষ্টদের শোকজ করেছে।

 

বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ এর মালিকানাধীন জমির প্রতিনিধি মো. লুৎফর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই জানান, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রথমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জমিতে ডাইক নির্মাণ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা অতি মুনাফা লাভের আশায় সর্বোচ্চ ৬ ফুট উচ্চতার ডাইক করার নিয়ম থাকলেও তা ৩০ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতায় বালু ভরাট করছে। যাতে ওই কোম্পনী অন্য জমির মালিকদের চরশ ক্ষতিসাধন করছে। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

অপরদিকে কৃষি জমির দরিদ্র মালিকরা জানান, মৎস্য চাষ ও ধান চাষের মৌসুম চলছে, বালু ভরাটের ফলে তাদের জীবন ধারনের জন্য মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র সহায় সম্বল টুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হচ্ছে। আমাদের ন্যয্য পাওনা না দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যায় ভাবে আমাদের উপর হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। এমনকি জেলা প্রশাসকের নির্দশনাও মানছেননা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, পশুর নদীর ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ফেলা নিয়ে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে হামলা ও মারধরের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব নিয়ে এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জমির মালিকদের ক্ষতিপুরণ দিতে বলা হয়েছিল। তারই মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটলো। তার পরেও প্রকৃত জমির মালিকরা তাদের ন্যায্য ক্ষতিপুরণ যাতে পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালক মো. শওকত হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মালিকগণ তাদের কাগজপত্র অনুযায়ী জমির ক্ষতিপুরনের টাকা যাতে পায় সে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিয়ম নীতি মেনেই বালু ভরাট করা হচ্ছে বলে বলে দাবি করেন । ###

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:২৫ | বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com