| রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট
মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম :
বাগেরহাট–৪ (মোরেলগঞ্জ–শরণখোলা) আসনের উপ–নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
শনিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলনকে মনোনয়ন দেয়ার সিন্ধান্ত চুড়ান্ত হয়।
এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন ১১ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. আব্দুর রহিম খান, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোশারফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের পুত্রবধু ইসমত আরা শিরিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নকীব নজিবুল হক নজু, কেন্দ্রীয় উপ–কমিটির সাবেক সদস্য যথাক্রমে এমআর জামিল হোসাইন, মিজানুর রহমান জনি, মোরেলগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. প্রবীর রঞ্জন হালদার, পৌর মেয়র এস এম মনিরুল হক ও এস এম রাজু।
শনিবার সন্ধায় গণভবনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহকারী সকলের সাক্ষাতকার গ্রহন করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন বাগেরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৫৩ সালে ২২ জানুয়ারি মোরেলগঞ্জ সদর বারইখালী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭২ সালে মোরেলগঞ্জ এসএম কলেজে ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতে খড়ি দেন। এর পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৯–১৯৮১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি কাদের–মজনু কমিটির জাতীয় পরিষদ সদস্য হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির দায়িত্ব পাবার পরপরই তিনি সামরিক সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৪ সালে কোর্ট মার্শালে মিথ্যা মামলায় এবং ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। তখন একটি হত্যা মামলায় কোর্ট মার্শালে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। পরে আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয় ওই দন্ডাদেশ।
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন ফিরেন নিজ এলাকা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। আইন পেশার পাশাপাশি চালিয়ে যান রাজনীতি। ৯০ দশকের শুরু থেকে সুদীর্ঘ ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৩ সাল থেকে অদ্যবদি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আশির দশকের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মধ্যে যে কয়জন আজও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় অবদান রাখছেন এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন তাদের মধ্যে অন্যতম।
উপজেলা পর্যায়ের এ নেতার চার দশকের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০১৫ সালে তাকে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ডাইরেক্টর হিসেবে নিযুক্তি ও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে স্থান পাওয়া। কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পাবার পর তিনি বাগেরহাট–৪ মোরেলগঞ্জ–শরণখোলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করাসহ অর্পিত কেন্দ্রীয় দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে জননেত্রীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হন ।
গত ২৪ নভেম্বর মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি–বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি আবারও উপজেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল পরবর্তী গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আবারও সদস্য হিসেবে স্থান পান এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
সর্বশেষ শনিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভার সিন্ধান্তক্রমে বাগেরহাট–৪ আসনের উপ–নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সক্ষম হন এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন বলেন, সারা জীবন মানুষের ভালবাসা নিয়ে রাজনীতি করেছি। মানুষের ভালবাসাই আমার সম্বল। আগামী নির্বাচনে এ আসনের জনগন বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকাকে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশা করেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাগেরহাট–৪ (মোরেলগঞ্জ–শরণখোলা) আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হয়।
গত ৬ ফেব্রæয়ারি নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপ–নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী এ আসনের উপ–নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ ফেব্রæয়ারি, যাচাই–বাছাই ২৩ ফেব্রæয়ারি, আপিল দায়ের ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রæয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ২৮ ফেব্রæয়ারি, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ২৯ ফেব্রæয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ১ মার্চ ও ভাট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে ২১ মার্চ–২০২০ ।
Posted ১৩:৪৪ | রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Rafiq Masum