| বুধবার, ১৯ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। আগামী ২১ এপ্রিল এ বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ বিশেষ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় অভিনব কায়দায় এ আদেশ দেন। এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে পেশ করা সময়ের আবেদনের ওপর শুনানিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল হয়। বিচারক এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় গিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দেয়। শুনানির এক পর্যায়ে বিচারকের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী অনাস্থার আবেদন দেন আইনজীবীরা। এ আবেদন করার পরও বিচারক সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
বিচারকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠান দুদক মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। দুদকের এ মামলা করার কোনো এখতিয়ার নেই। সরকারের ইচ্ছা পূরণের জন্যই দুদক এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি। আমাদের আবেদন আপিল বিভাগে এখনো বিচারাধীন। এই অবস্থায় নিম্নআদালতে এ মামলার বিষয়ে কোনো আদেশ দিতে পারে না। কিন্তু বিচারক বাসুদেব রায় সরকারের পক্ষে বিরোধী দলকে দমনের উদ্দেশ্যে এ মিথ্যা মামলাটিতে দুদকের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সরকারের নির্দেশে আইন, কানুন, বিধি-বিধান কিছুই আমলে নেয়নি এ বিচারক। তবে সরকার পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন।
অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য গতকাল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তিনি ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে যান। এ সময় আদালতের ভেতরে ও বাইরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত নেতারাসহ কয়েক হাজার আইনজীবী জড়ো হন। তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৬ তলায় বিশেষ জজ আদালত-৩ এ বিচার কাজ চলাকালে খালেদা জিয়াকে বসার জন্য একটি চেয়ার দেয়া হয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, খন্দকার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাকা বারের সিনিয়র শতাধিক আইনজীবী।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিতর্কিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ওই সময় দুদক একাধিক মামলা করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের নামে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। অপরদিকে বিএনপি নেতানেত্রীদের নামে দায়ের করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালু রাখে। একই সঙ্গে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
জিয়া অরফানেজ মামলায় বিতর্কিত ওয়ান ইলেভেন সরকারই ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এই মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুদক ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের কথিত অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলাটি দায়ের করে। পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দুটি মামলারই বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ।
Posted ১৩:১৮ | বুধবার, ১৯ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin