শুক্রবার ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি

  |   শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে দেড় হাজারের উপরে। যদিও ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে আসছিল ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট। ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এ সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের অতিরিক্ত গড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করেছে। এ হিসাবে গত দেড় বছরে এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত এ সিন্ডিকেটের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি হলো— ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।

সিন্ডিকেটের সদস্য প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটসের কর্ণধার আরিফ আলম। এছাড়া ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক বায়রার সদ্য সাবেক মহাসচিব মো. রুহুল আমিন স্বপন, রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের মালিক বায়রার সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ বশির, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের মালিক বায়রার সাবেক সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা ও সানজারি ইন্টারন্যাশনালের মালিক শেখ আবদুল্লাহ। এছাড়া ক্যারিয়ার ওভারসিজের মালিক কর্ণধার রুহুল আমিন ও বদরুল আমিন। আল ইসলাম ওভারসিজের কর্ণধার জয়নাল আবেদীন জাফর, যিনি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক। আর আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক মো. রুহুল আমিন।

বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে এ সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এর আগে গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে কর্মী নিয়োগের বিশেষায়িত পদ্ধতি এসপিপিএ (যা জিটুজি প্লাস নামে পরিচিত) থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মূলত ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত ছিল মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বাংলাদেশ অংশে কাজ করেছে এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট। এ চক্র ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীপ্রতি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জিটুজি সমঝোতায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পুরুষ কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় নির্মাণ বা কারখানা শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার ও কৃষি শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণের জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় আলোচনা করে চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়। যদিও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মালয়েশিয়ায় পুরুষ শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাই জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নির্ধারিত খরচ এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৫৭৫ টাকাই বহাল রয়েছে। এর মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জসহ উড়োজাহাজ ভাড়া ১৭ হাজার ও ভিসা ফি ৫ হাজার ৪০০ টাকা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্রসহ অন্যান্য ফি ৭ হাজার টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সিআর আবরার এ প্রসঙ্গে বলেন, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্তটি যে যুক্তিযুক্ত নয়, সেটা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল। এর পরও সরকার সবসময় এর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে আসছিল, যা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো— আমাদের সরকার কিন্তু এ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধরেনি। অভিযোগ তুলেছে মালয়েশিয়া সরকার। অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এরই মধ্যে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধও করে দিয়েছে তারা। এতে বাংলাদেশ আবারো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হারাল, যা কাম্য ছিল না।

তিনি বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ এ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কেবল ১০টি এজেন্সি নয়, আরো কারা কারা এর পেছনে ছিল, সেটা খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে হারানো শ্রমবাজারগুলো পুনরায় চালু করার জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হলেও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকসহ দেশটির তত্কালীন সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে আঁতাত করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মালয়েশীয় নাগরিক আমিন বিন আব্দুন নূর পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সে দেশের রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলাসহ প্রভাবশালীদের নিয়ে সিনারফ্ল্যাক্স নামে একটি কোম্পানি তৈরি করে বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে কর্মী নেয়া হতো।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রিক্রুটিং এজেন্সি লাব্বায়িক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক মতিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত দেড় বছরে বাংলাদেশ থেকে যত শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছেই কেবল ভিসা প্রসেসিং ও উড়োজাহাজের টিকিট বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি। যদিও এ কাজের জন্য ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার টাকা। এর বাইরে প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে আরো অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট। অথচ কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

এর আগে ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক সই হয়। কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। এর এক বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গেছেন প্রায় দুই লাখ কর্মী।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালে তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জিটুজি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে দেশটিতে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিক যান। আর ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠিয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৯ জন শ্রমিক।সূত্র : বণিক বার্তা

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:২২ | শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com