নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা রূপরেখা বিএনপির আন্দোলনের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যিনি এ ধরনের রূপরেখা দিতে পারেন তাকে বলা হয় ‘স্টেটসম্যান‘। আর তারেক রহমান সেই কাজটিই করেছেন। তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে তিনি বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। তত্ত্বাবধানে ছিল বিএনপি মিডিয়া সেল।
আমির খসরু বলেন, দেশের যে অবস্থা তাতে নিষেধাজ্ঞা আসবে সেটা স্বাভাবিক। কারণ এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না। গুম-খুন করা হচ্ছে। দূতাবাসের কাজ হলো জনগণের পক্ষে কাজ করা। নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর কাজ তাদের না। একই সঙ্গে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ যত কালো আইন আছে সবই বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে হলে একটা ট্র্যাকে আনতে হবে। সেজন্যই তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, যারা শিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ তাদের সমন্বয়ে আপার হাউজ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে হতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই খাতে ১ জিডিপির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কারণ এখানে সরকারের দুর্নীতি বেশি। ফলে দেশের মানুষের নিজের টাকা খরচ করেই চিকিত্সা নিতে হয়। যা আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ। এসব বিষয়ে সারাদেশে সেমিনার করা জরুরি। কারণ একটি পরিবারকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হলে তার প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। একটি পরিবার যদি ৫ হাজার টাকা সেভ করতে পারে তবে ওই পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায়। সেই টাকায় ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারে। দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশে যা হচ্ছে, তা লুট। দেশের টাকা বিদেশে পাচারের জন্য মেগা প্রজেক্ট করা হচ্ছে। একটা গাড়ি আছে আরেকটা কীভাবে কেনা যায় সেটা করে। আজকে ৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। তাদের সময় কোথায়? তারা কি আইন প্রণয়ন করছে?
আমীর খসরু বলেন, আমাদের ২৭ দফা দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে ২৭ দফার প্রয়োজনীয়তা। কারণ তারা জানতে চাইছে, বর্তমান সরকারপ্রধান চলে গেলে কী হবে? সেই জন্যই কিন্তু আমরা ২৭ দফা রূপরেখা দিয়েছি। এই দফাগুলো হলো আমাদের আন্দোলনের অংশ। আমাদের আন্দোলনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবে না। রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই ২৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে স্মার্ট বাংলাদেশের নামে স্মার্ট ভোট চুরি, শেয়ারবাজার লুট হবে। ১০ লাখ কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি না।
আমী খসরু বলেন, আজকে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশকে গভীর গর্ত থেকে তুলে আনতে হলে ২৭ দফার বিকল্প নেই। এগুলো যারা দিতে পারেন তাদের বলা হয় স্টেটসম্যান। এই রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বিশ্বের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে জনগণের সঙ্গে কিছু চুক্তি বা ওয়াদা দিতে হবে। সেটাই করেছেন তারেক রহমান। যা রাজনীতিবিদরা খুব একটা করতে পারেন না। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বের যোগ্যতা অনেক ওপরে স্থান পেয়েছে। যা বিদেশিরাও প্রশংসা করছেন। তারা জানতে চাইছেন, বিএনপি এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না?
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। আপামর জনসাধারণের দাবিগুলো এই রূপরেখায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন ভীষণ সংকটে আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। মাঝে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তা আরও গতিময় হয়েছে। দেশটা এখন একটা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই রাষ্ট্রকে ফেরত আনতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা বলা যাবে না। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা দেশের অসহায় মানুষের মুক্তির সনদ।
ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান।
ঢাকা উত্তর ড্যাবের মহাসচিব ডা. এ এস এম মো. মাসুম বিল্লাহর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ড্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
Posted ০৯:০০ | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain