| শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী সূচিত্রা সেন আর নেই। কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৫৫মিনিটে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তার মৃত্যুতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকাবিভুত পুরো ভারতের চলচ্চিত্র জগৎ। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ সর্বস্তরের মানুষ হাসপাতালে ছুটে যান। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারি এই মহানায়িকার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালদো জিয়া।
গত ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফুসফুসে পানি আসার কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য ডা. সুব্রত মৈত্রের নেতৃত্বে শারিরীক অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হলে রাত ১০টা ২০মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেন। এরপর তার ইসিজি ও সিটিস্ক্যানসহ বেশ‘টি পরীক্ষাও করা হয়। রাত পর্যন্ত তার অবস্থা পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। হৃদযন্ত্রের গতিও বেশ অনিয়মিত বলে জানা গেছে। এর আগে ২০০৭ সালের অক্টোবর, ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারি এবং ২০১০ সালের জুন মাসে চিকিৎসক মৈত্রের অধীনেই তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার পর থেকেই মিডিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন ৮৩ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী। ১৯২৯ সালে বাংলাদেশের পাবনার জন্ম নেয়া রমা দাশগুপ্ত পরে সুচিত্রা নাম নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রীতে পরিণত হন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো আজও বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সুচিত্রা অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দ্বীপ জেলে যাই, সবার ওপরে, সাড়ে চুয়াত্তর, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত ইত্যাদি। হিন্দি চলচ্চিত্র আাঁধিতে তার অভিনয়ও প্রশংসনীয়। শিল্পপতির ছেলে দীবানাথ সেনকে বিয়ে করেন সুচিত্রা, মুনমুন তাদের একমাত্র সন্তান।
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামে চিলচ্চিত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রুপালী জগতের যাত্রা শুরু হয় সুচিত্রা সেনের। হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ‘দেবদাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৫৫ সালে জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করেন তিনি। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে এসে ‘আন্ধি’ ছবিতে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেন সুচিত্রা। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান তিনি। আর এই সম্মানের মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত হন সুচিত্রা সেন। ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেন সর্বকালের জনপ্রিয় এই নায়িকা। এরপর আকস্মিকভাবেই জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা দেখা সাক্ষাৎ করতেন না তিনি। ২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি। ফলে তাকে আর পুরস্কারটি দেয়া হয়নি।
ফ্ল্যাশ ব্যাক সুচিত্রা : বাংলা সিনেমার অনন্য রহস্যময়ী
বাছির জামাল
রহস্যের অন্য নাম সুচিত্রা সেন। রূপালী পর্দার কিংবদন্তী নায়িকা, বাংলা চলচ্চিত্রের গ্ল্যামার হিরোইন। তাঁকে নিয়ে প্রচরের শেষ নেই, অন্ত নেই অপ-প্রচারের। বহু রঙিন কল্পনা তাঁকে কেন্দ্র করে, বহু জটিল কল্পনাও। অথচ যাকে নিয়ে এতোকিছু, সেই সুচিত্রা সেন নির্বিকার।
সুচিত্রা সেনের পারিবারিক বন্ধু ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক গোপালকৃষ্ণ রায় একবার খাতা-পেন্সিল দিয়ে সুচিত্রা সেনকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘যখন ভাল লাগবে, ইচ্ছে করবে, তখনই জীবনের কথা, অভিজ্ঞতার কথা লিখে রেখো’। কিন্তু সুচিত্রা সেন লিখেননি। বলেছিলেন শুধু, ‘অভিজ্ঞতা আর জীবনের কথা লিখতে গেলে অনেক রাসকেলের কথা লিখতে হবে আমাকে। আমার এ দীর্ঘ চিত্রজীবনে অনেক রাসকেলই এসেছে। ছাপার হরফে নাম ছাপিয়ে তাদের সম্মান দেয়ার ইচ্ছে আমার নেই।’ রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই সাংবাদিক বন্ধুকে তিনি বলেছিলেন, ‘সব চেয়ে আরও ভাল চুপ করে থাকা’। (দেখুন সুচিত্রার কথা, গোপালকৃষ্ণ রায়, পৃষ্ঠা ৩১, ৩২, আনন্দ পাবলিসার্স প্রকাশকাল ১৯৯৩) দুই দশকেরও অধিককাল তিনি চুপ করে আছেন। জনারণ্যে তাঁকে দেখাই যায় না। অথচ জনমানসে সতত উপস্থিতি তঁথার। কাছের মানুষ যারা, তারা জানেন সুচিত্রা সেন আপন মনোবিহারিণী। সেই কবে মহানায়কের সাথে জুটি বেঁধে তিনি নিজেও হয়ে উঠেছিলেন মোহময়ী মহানায়িকা। উত্তম কুমার জুটি থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি নিজেও সরে এসেছেন রূপালী পর্দা থেকে তবু এখনো তার মোহিনী মায়ায় উদ্বেল আপামর জনসাধারণ। জীবন্ত কিংবদন্তী বলতে যা বুঝায় সুচিত্রা সেন তাই। এই জীবন্ত কিংবদন্তী সুচিত্রার বাড়ি আমাদের বাংলাদেশেল পাবনায়। পাবনা শহরের গোপালপুর এলাকার জেলাপাড়ার সেই বাড়িটি আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সুচিত্রার স্মৃতি নিয়ে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কোলকাতায় বাংলাদেশের ক’জন তরুণ দেখা করতে গিয়েছিল সুচিত্রা সেনের সাথে। অনেকক্ষণ কথা বলার পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ি তো পাবনায়। পাবনা গার্লস স্কুলে পড়েছি। শৈশবের কত মধুর স্মৃতি সেখানে।’
(জনকণ্ঠ, কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের … সমুদ্র হক, ২৩ মার্চ, ২০০২ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ১২)
শুধু পাবনা নয়। তাঁর জীবনের উত্তরণের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের যশোর, ভারতের পাটনা, শান্তি নিকেতন ও শেষে কোলকাতা শহর। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে এসব শহরে থেকেছেন। তিনি যে নামে বাঙালি মানসে এখনো রোমাঞ্চ ছড়ান, সেই সুচিত্রা সেনের উত্থান পর্ব কোলকাতা শহরের নিভৃতকোণে আজও বাস করছেন। তার জš§ হয়েছে পাটনায়। ৬ এপ্রিল। মামার বাড়ি। সেকালের বাঙালি অভিজাত পরিবারের, নিদেনপক্ষে, বড় সন্তানের জšে§র রেওয়াজ ছিল মামার বাড়ি। সেই রেওয়াজ মেনেই সুচিত্রার জš§।
সুচিত্রা সেনের ছিল ৩ ভাই ৫ বোন। তাঁর বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত, মা ইন্দিরা। সুচিত্রা সেন নামে সবার কাছে পরিচিত হলেও তার মামারা ডাকতেন ‘কৃষ্ণা’ বলে। বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির আÍীয়রা ডাকতেন ‘রমা’ বলে। রমা সেন নামেই তিনি বড় হয়েছেন। স্কুল-কলেজের কাগজে-কলমে, এমনকি বিয়ের রেজিস্ট্রেশনেও এই নামই রয়ে গেছে। কিন্তু ঘরোয়া আড্ডায় কাছের মানুষরা ডাকতো ‘বাঙাদি’। অভিনয় সৌকর্য ও সৌন্দর্যে রাঙা ছিলেন বলেই কি রাঙাদি তাদের কাছে? এখন তো সবকিছু তার ‘সুচিত্রা সেন’ নামেই হয়। সবকিছু ছাপিয়ে সুচিত্রাই দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে। চলচ্চিত্রে এই নামটা দিয়েছিলেন নীতিশ রায়। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারি। সুচিত্রা বলেন, কোন ছবিতে তিনি এই নাম দিয়েছিলেন তা আজ আর মনে নেই। একদিন সকলের সামনে বললেন, চিত্রজগতে আজ থেকে আপনি সুচিত্রা সেন। সেই থেকে শুরু অথবা জš§ হলো সুচিত্রা সেনের। অনেকেই হয় তো মনে করেন, আমার নাম পাল্টানোর মধ্যে একটা ইতিহাস আছে। আসলে কিছু নেই।
(সুচিত্রার কথা, গোপালকৃষ্ণ রায়, পৃষ্ঠা ৫৫, আনন্দ পাবলিসাসৃ, প্রকাশকাল ১৯৯৩)
সুচিত্রা সেন সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন বিয়ের ৩/৪ বছর পর। কোলকাতার অভিজাত পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালে। বিয়ের ৩/৪ বছর পর। কোলকাতার অভিজাত পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালে। বিয়ের ৩/৪ বছর পর যদি, তাঁরই স্বীকারোক্তিতে, অভিনয় শুরু করেন, তাহলে সুচিত্রার অভিনয় জীবনের শুরু ১৯৫১ সালে।
অবশ্য সুচিত্রার বিনোদন জগতের সাথে পরিচয় হয় নেপথ্য গায়িকা হিসেবে। স্বামী দিবানাথ সেনের উৎসাহে তিনি এ পর্যন্ত পা বাড়িয়েছিলেন। অডিশন দিয়ে উৎরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু গান আর গাইলেন না। অদৃষ্টে যার রূপালী পর্দার তারকা খ্যাতি রয়েছে, তার কি আর শুধুই নেপথ্যে গায়িকা মানায়। মানায় না। তখনকার বিখ্যাত পরিচালক বিমল রায় ছিলেন সেন পরিবারের আÍীয়। দিবানাথ সেনের পিতা আদিনাথ সেনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন তার বোন। বোন মরে গেলেও তাদের সাথে সম্পর্ক অটুট ছিল। এভাবেই সিনেমায় নামার উৎসাহ পান সুচিত্রা সেন। তার স্বামীরও ইচ্ছে। অবশেষে শ্বশুর আদিনাথ সেনেরও অনুমতি মিললো। বললেন, তোমার মধ্যে যদি ট্যালেন্ট থাকে, তাকে নষ্ট করার অধিকার আমার নেই মৌমা! অতএব, তোমার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে আমি বাধা দেবো না।
অনুমতি পাওয়ার পর প্রথম যে ছবিতে তিনি কাজ করেছিলেন, সেই ছবির নাম মনে নেই সুচিত্রা সেনের। ছবিটি রিলিজ হয়েছিল কিনা তাও মনে নেই। ছবির কোন কলাকুশলীর নাম মনে না থাকলেও তিনি এই ছবির সবার প্রতি এখনো শ্রদ্ধাশীল। সুচিত্রা সেন বলেন, সিনেমার সন্ধান পেয়েছিলাম বিমল রয়ের কাছে। আর উৎসাহিত করেছিলেন আমার স্বামী দিবানাথ সেন। এরপর তো ইতিহাস। সুচিত্রা সেনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদী’। এ ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। কিন্তু ‘কাজরী’ তার প্রথম ছবি। এ ছবির নায়ক ছিলেন বীরেন চ্যাটার্জী। যে কোন কারণেই হোক ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৩ সালের ১০ এপ্রিল। একই সাথে আরও ৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এর দু’টি ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। ১৯৫৪ সালে সুচিত্রা সেন অভিনীত ৯টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তার মধ্যে ৬টি ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। এই সাল থেকে তাদের জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবি দিয়েই এই জুটির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
(ভারতীয় চলচ্চিত্রের রূপরেখা, রচনা ও সম্পাদনায়, পার্থ প্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ১০৩, বাণী শিল্পী প্রকশনী, ১৯৯৭)
উত্তমের সাথে জুটির কথা বলতে গিয়ে সুচিত্রা সেন জানান, ১৯৫৫ সালে উত্তমের সাথে ছবি করেছিলাম মাত্র ৩টি। সুচিত্রা-উত্তমের রোমান্টিক জুটি ওই দশকেই মানুষের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে। পঞ্চাশের দশকে যে ৩৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল তর ২৩টির নায়ক ছিলেন উত্তম। তার সাথে জুটি গড়তে অনেক জট খুলতে হয়ছিল। সুচিত্রা সেন বলেন, ওর সাথে অভিনয় করে একটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করা যেতো। মনকে বড় না করতে পারলে- বড় অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়া যায় না। উত্তম আর পাহাড়ীদার মনটা ছিল বড়।
(প্রাজক্ত, গোপালকৃষœ রায়, পৃষ্ঠা ১০৯ ও ১৬১)
অনেকেই বলেন, চলচ্চিত্র থেকে তিনি বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ঘোষণা করে চিত্রজগত থেকে বিদায় নেননি। কয়েক বছর ছবিতে কাজ না করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর তিনি আর কোন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হননি সত্য। কিন্তু সুচিত্রার ঘনিষ্ঠ গোপালকৃষ্ণ রায় বলেছেন, এরপরও তিনি অনেক পরিচালকের ছবির স্ক্রিপ্ট শুনেছেন। কিন্তু ভিনয় করতে ভরসা পাননি। তাই তাদের না করে দিয়েছেন। এর একটি কারণও হয় তো এই যে, তখনকার বাংলা সিনেমায় নান্দনিক দিকের পরিবর্তে সবেমাত্র সেক্স ও ভায়োলেন্স আসতে শুরু করেছে। এর সাথে তিনি হয় তো মানাতে ারবেন না বলেই সিনেমার জগত থেকে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে। আর মুনমুন সেন চলচ্চিত্রে আসার পর একেবারেই অন্তর্মুখী হয়ে যান তিনি। এ সময় তিনি মঞ্চে কাজ করার প্রস্তাব পান। প্রথমদিকে মঞ্চে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও পরে আর ওমুখো হননি। নিজের বাড়িতে একটি অভিনয় শিক্ষার ইনস্টিটিউট দেয়ার কথাও ভেবেছিলেন। পরে তাও দেননি। একটি বড় রাজনৈতিক দল থেকে রাজনীতিতে নামারও প্রস্তাব এসেছিল। তাও ফিরিয়ে দেন তিনি। এখন তিনি সারাদিন ঘরেই থাকেন। ঘর গোছানো আর পূজার্চনাই তার সম্বল।
এখন কয়েকটি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে বলবো। সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেন মারা যাণ ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর। এর আগে থেকেই তারা আলাদা থাকতেন। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেননি। সবাই জানেন, এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে মুনমুন। কিন্তু তাদের একটি ছেলে সন্তানও হয়েছিল। মারা গেছে। মুনমুনের বিয়ে হয়েছে কবে! তার ঘরেও দু’সন্তান- রিয়া, রাইমা। কোলকাতার এক আলিসান বাড়িতে থাকেন একা সুচিত্রা সেন। কিন্তু একা থাকতে কেমন লাগে তার? এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলা সিনেমার মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী সুচিত্রা সেনের উত্তর, ‘আই মে বি এ্যালোন, বাট নেভার ফিল লোন-লি’ (আমি একা হতে পারি, কিন্তু একাকীত্ব অনুভব করি না)।
লেখক : বাছির জামাল
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
Posted ০৯:৪২ | শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin