রবিবার ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাড়ের ইনফেকশন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

হাড়ের ইনফেকশন

 ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল  : হাড়ের ইনফেকশনকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে অস্টিওমাইলাইটিস। এক্ষেত্রে হাড় ও অস্থিমজ্জায় সংক্রমণ ও প্রদাহ হয়। সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে বা নিকটবর্তী টিস্যু থেকে ছড়াতে পারে। আবার সংক্রমণ হাড় থেকেও হতে পারে, যদি হাড়টি আঘাত পেয়ে জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। যেসব লোক ধূমপান করেন এবং যারা দীর্ঘস্থায়ী রোগে যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনির বিকলতায় ভুগছেন, তাদের অস্টিওমাইলাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।

 

যদিও একসময় অস্টিওমাইলাইটিসের চিকিৎসা সহজ ছিল না, কিন্তু বর্তমানে সফলভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যেসব লোকের হাড় মরে যায়, তাদের অপারেশনের মাধ্যমে মৃত হাড় অপসারণের প্রয়োজন হয়।

 

উপসর্গ : অস্টিওমাইলাইটিসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- * জ্বর * ইনফেকশনের স্থান ফুলে যাওয়া, গরম হওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া * ইনফেকশনের স্থানে ব্যথা হওয়া * অবসন্নতা ইত্যাদি। অস্টিওমাইলাইটিসে কখনো কখনো কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। কখনো কখনো উপসর্গগুলো অন্য সমস্যা থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি নবজাতক, বয়স্ক লোক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বেশি সত্য।

 

হাড়ের ইনফেকশনের কারণ

বেশিরভাগ অস্টিওমাইলাইটিসের কারণ হলো স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া সাধারণভাবে সুস্থ মানুষের ত্বকে ও নাকে দেখা যায়। জীবাণুগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে হাড়ে ঢুকতে পারে-

 

  • রক্ত-আপনার শরীরের অন্য স্থানের জীবাণু-উদাহরণস্বরূপ নিউমোনিয়া আক্রান্ত ফুসফুস থেকে কিংবা প্রস্রাবের ইনফেকশন যুক্ত প্রস্রাবের থলি থেকে এই জীবাণু রক্তের মাধ্যমে আপনার হাড়ের দুর্বল স্থানে যেতে পারে। * ইনজুরি- আঘাতের দ্বারা আপনার ত্বকে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হলে জীবাণু আপনার শরীরের গভীরে ঢুকে যেতে পারে। যদি আঘাতের স্থানটি সংক্রমিত হয়, জীবাণু পার্শ্ববর্তী হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার যদি আঘাতের ফলে আপনার হাড় ভেঙে গিয়ে ভাঙা হাড় চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে, তাহলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

 

  • সার্জারি- জয়েন্টে অপারেশন বা কোনো ভাঙা হাড় লাগানোর সময় সরাসরি জীবাণুর সংস্পর্শ ঘটতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

আপনার হাড় স্বাভাবিকভাবে ইনফেকশন প্রতিহত করতে পারে, কিন্তু যখন আপনার বয়স বাড়তে থাকে এই সুরক্ষার মাত্রাও কমতে থাকে। অন্য কিছু বিষয়ও হাড়কে ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে।

 

  • সাম্প্রতিক আঘাত বা অর্থোপেডিক সংক্রান্ত সার্জারি- মারাত্মকভাবে হাড় ভেঙে গেলে কিংবা গভীর ক্ষত হলে আপনার হাড়ে বা আশপাশের টিস্যুতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। পশু-পাখির কামড় কিংবা জুতার মাধ্যমে নখে ইনজুরি হলে সেখান থেকেও ব্যাকটেরিয়া ঢুকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। ভাঙা হাড় অপারেশনে ঠিক করার সময় বা জোড়া প্রতিস্থাপনের সময় হাড়ে জীবাণু ঢুকতে পারে। হাড় বা জোড়ায় স্থাপিত অর্থোপেডিক জিনিসপত্র ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

 

  • রক্ত সঞ্চালনে অস্বাভাবিকতা-

যখন রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বন্ধ হয়ে যায়, আপনার শরীরের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী কোষগুলো সমস্যায় পড়ে যায়। একটি ছোট কেটে যাওয়া থেকে বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গভীর টিস্যু ও হাড় উন্মুক্ত থাকে এবং সেখানে ইনফেকশন হতে পারে।

কিছু রোগে রক্তসঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়-

  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস * প্রান্তিক রক্তনালির রোগ, যা সচরাচর ধূমপানের সঙ্গে সম্পৃক্ত

  • সিকেল সেল রোগ * যেসব রোগে শিরাপথে চিকিৎসা বা ক্যাথেটার দেওয়া হয়-

 

  • ডায়ালাইসিস * ইউরিনারি ক্যাথেটার, * শিরাপথে স্যালাইন * যেসব অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়- যদি কোনো কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আপনার হাড়ে সংক্রমণ হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। নিচের বিষয়গুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখে-* ক্যান্সারের চিকিৎসা * অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস * কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ * নিষিদ্ধ ওষুধ। যেসব লোক শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ওষুধ গ্রহণ করেন, যেহেতু তারা জীবাণুযুক্ত সুই ব্যবহার করেন তাই তাদের হাড়ের ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 

জটিলতা : হাড়ের ইনফেকশনে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে- * হাড় মরে যাওয়া, আপনার হাড়ে ইনফেকশন হলে হাড়ের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হাড় মরে যায়। হাড়ের যে স্থানটি মরে যায় সেটি অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হয়, তাহলে এন্টিবায়োটিক ভালো কাজ করে। * সেপটিক আর্থ্রাইটিস কখনো কখনো হাড়ের ইনফেকশন পার্শ্ববর্তী জয়েন্টে ছড়িয়ে যায়। * বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া : শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় বা জয়েন্টের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় যদি সংক্রমণ হাড়ের নরম এলাকা বা গ্রোথ প্লেটে ঘটে। * ত্বকের ক্যান্সার, যদি হাড়ের ইনফেকশনের ফলে পুঁজ বেরিয়ে আসতে থাকে তাহলে সেখানকার ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

 

প্রতিরোধ : যদি আপনার হাড়ের ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকি থাকে তাহলে ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।  সাধারণভাবে কেটে যাওয়া, ছিলে যাওয়া বা প্রাণীর আঁচড় বা কামড়ানো এড়িয়ে চলবেন, কেননা এক্ষেত্রে সহজে জীবাণু ঢুকতে পারে। যদি আপনার নিজের বা আপনার সন্তানের শরীরের কোথাও সামান্য কেটে যায়, তাহলে জায়গাটি দ্রুত পরিষ্কার করুন ও সেখানে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বেঁধে দিন। ক্ষতটিতে ইনফেকশনের চিহ্ন দেখার জন্য ঘন ঘন পরীক্ষা করুন। তাই হাড়ের এসব বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।

 

লেখক : উপাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক অর্থোপেডিক সার্জারি, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:৪১ | শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com