| শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি, ওল্ডহাম : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অটুট এবং গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও লড়াইয়ের শপথ গ্রহন করেছেন যুক্তরাজ্যের মানচেস্টার সিটির ওল্ডহামে অবস্থানরত বাংলাদেশী বংশদ্ভুত বৃটিশ নাগরিকরা।
সেইভ বাংলাদেশ নামক সংগঠনের উদ্যোগে চলমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে এই শপথ গ্রহন করেন। যুক্তরাজ্যের গ্রেটার মানচেস্টার সেইভ বাংলাদেশের আহ্বায়ক নোমান আহমদের সভাপতিত্বে বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাতে ওল্ডহাম মুসলিম সেন্টারের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য ১৮ দলীয় জোট নেতা মুফতি শাহ সদরুদ্দিন। সমাবেশে বিশেষ অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও নবগঠিত নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক এম এ মালেক, ১৮ দলীয় জোট নেতা ও যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যাপক আবদুল কাদির সালেহ, সেইভ বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান, ইসলামিক ফোরাম ইউরোপের যুক্তরাজ্য শাখার অন্যতম নেতা আতিকুর রহমান জিল্লু। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশী বংশদ্ভুত বৃটিশ নাগরিকদের কমিউনিটি লিডার নানু মিয়া, প্রকৌশলী ড.দিলদার চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাহিদ হোসাইন, কমিউটিনি নেতা এখলাছুর রহমান, মাওলানা আবদুল কাইয়ূম কামালি, ব্যবসায়ী গয়াছ উদ্দিন, ওল্ডহাম বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, কমিউনিটি নেতা আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা শরীফ হোসাইন, প্রজন্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক আবদুল হামিদ টিপু প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইকবাল হোসাইন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা আমিনুর রহমান ও মাসুম আহমদ। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।
মুফতি শাহ সদরুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এখন শুধু একটি নির্বাচন আদায়ের লড়াই নয়। এই লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের ঈমান আক্বিদা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকবে কি থাকবে না, ঈমান আক্বিদা নিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা চলতে পারবে কি পারবে না সেটা নির্ভর করছে বর্তমান চলমান লড়াইয়ে। এই লড়াইয়ে বিজয়ী হতে হলে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে ঈমানের সঙ্গে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুুত বলে শপথ নেন। মুফতি সদরুদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়ে সরকার প্রমান করেছে আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। কারন বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ন্যায় বিচার হলে আবদুল কাদের মোল্লা বেকসুর খালাস পেতেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে কোন সাক্ষী নেই। যেই সাক্ষীর ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্ট ফাঁসি দিয়েছে সেই সাক্ষী ৩ রকমের বক্তব্য দিয়েছেন। এধরনের সাক্ষীর ভিত্তিতে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে কাউকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব নয়। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হচ্ছে শাহবাগিদের খুশি করার দন্ড, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হচ্ছে ইসলামি আন্দোলনকে দমন করার দন্ড।
এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশ আজ অস্থিত্বের সংকটে। দেশের মানুষের জান মালের কোন নিরাপত্তা নেই। জনগনের টাকায় লালিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারী দলের ক্যাডাররা সম্মিলিত ভাবে বিরোধী দলের বাড়ি ঘড়ে হামলা চালাচ্ছে, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দিচ্ছে, নারীদের ধর্ষন করছে, প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ খুন করছে সরকারি বাহিনী গুলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ভারতের কাছে বিকিয়ে দিতেই সরকার এই খুন, বাড়িঘর লুটপাট ও ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনই শুধু নয়, এই লড়াই হচ্ছে বাংলাদেশের অস্থিত্বের লড়াই। দলমত নির্বিশেষে সবাই এই লড়াইয়ে অংশ নিয়ে দেশ বাঁচাতে হবে।
অধ্যাপক আবদুল কাদির সালেহ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ সরকারি সন্ত্রাসের কাছে অসহায়। তারপরও জনতা রাজপথ অবরোধ করছে। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের দেশের মানুষের মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের আলোকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানের মূলনীতির অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাতিল করেছে। সেই জায়গায় মূলনীতিতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভক্ত করেছে। শহীদ জিয়াউর রহমান গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা মূলনীতির অংশ করেছিলেন। শেখ হাসিনা গণভোট না দিয়ে নিজের ইচ্ছামত সেটা সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করেছেন। তিনি বলেন, চলমান এই লড়াই শুধু নির্বাচন আদায়ের লড়াই নয়, আমাদের ইমান, আক্বিদা নিয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার লড়াই। তিনি বলেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে তারা ইসলামি আক্বিদা ও বিশ্বাসের রাজনীতিকে তারা বাংলাদেশে ধ্বংস করতে চায়। এই লড়াই হচ্ছে একটি দীর্ঘস্থায়ী লড়াই। সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য্য এবং হেকমতের সঙ্গে জালিমদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে।
ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লাকে বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে ইসলামি আন্দোলন ধ্বংস করা যাবে না। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আবদুল কাদের মোল্লার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ রয়েছে। আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যের প্রতি আলোকপাত করে তিনি বলেন, দুনিয়ার কোন বিচারে এই সাক্ষীর ভিত্তিতে দন্ড হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু শুধুমাত্র ইসলামের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারনেই আবদুল কাদের মোল্লাকে জালিম সরকারের ষড়যন্ত্রে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে হাজার হাজার আবদুল কাদের মোল্লা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।
অলিউল্লাহ নোমান বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে কী হচ্ছে সেটার বড় প্রমান হলো বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ স্ক্যান্ডাল। এই কথোপকথনে উঠে এসেছে আদালতে মামলা দায়েরের আগেই কিভাবে শাস্তি নির্ধারিত হচ্ছে। মামলা আদালতেই আসেনি অথচ স্কাইপ স্ক্যান্ডলে দেখা যায় সেই ব্যক্তির শাস্তি কী হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিচারের নামে এর চেয়ে জঘন্য প্রহসন আর হতে পারে না। তিনি বলেন, ভিনমতের পত্রিকা ও টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়ে একতফা আওয়ামী গণমাধ্যম্যে মিডিয়া ট্রাইয়াল হচ্ছে। বিচারের আগে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে সরকার। মিডিয়া ট্রায়ালকেই আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
Posted ২১:৪৩ | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin