সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

সেলফি তোলা কি জায়েজ?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট

সেলফি তোলা কি জায়েজ?

বর্তমানে নিজেকে প্রদর্শনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম সেলফি। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি বাজে আসক্তি। ইসলামে সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশে সেলফি তোলা তো দূরের কথা, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলারও সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হাশরের দিন সর্বাধিক আজাবে আক্রান্ত হবে তারাই, যারা কোনো প্রাণীর ছবি তোলে অথবা আঁকে।’ (বুখারি: ৫/২২২২)

 

অনেকে বলে থাকেন, বর্তমান যুগে সেলফির বিরুদ্ধে ফতোয়া অগ্রহণযোগ্য। কারণ সেলফি নাকি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তারা বুঝতে পারে না, ইসলাম চলে ইসলামের গতিতে। ইসলামের অনুশাসন ও রীতি নীতি কেবল প্রয়োজনের তাগিদে ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দেয়। যেমন প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েজ। কিন্তু অপ্রয়োজনে না। তদ্রূপ কোনো কারণে সেলফি যদি অবশ্যই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন তা জায়েজ হতে পারে। তা-ও আলেমদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে প্রয়োজনটা আসলে কেমন।

আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, ওয়াজ মাহফিলের ভিডিও করা গেলে সেলফি তোলাতে সমস্যা কী? এটি অজ্ঞতামূলক প্রশ্ন। কারণ, কিছু শর্তসাপেক্ষে আলেমরা এটাকে জায়েজ বলেছেন। এক. নাজায়েজ কোনো বিষয় না থাকা এবং দুই. ইখলাসের সঙ্গে দ্বীন প্রচারের নিয়ত থাকা ইত্যাদি। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ দেখায় সে উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর মতোই সওয়াব পায়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৮৯৩)

 

সচরাচর সেলফির যে ব্যবহার আমরা দেখতে পাই, তার মূল উদ্দেশ্যই হলো আত্মপ্রদর্শন। যাকে শরিয়তের ভাষায় ‘রিয়া’ বলে। এই প্রদর্শন যদি হয় ইবাদতের ক্ষেত্রে, তাহলে তা ঈমানকে ধ্বংস করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। কেননা রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ তাআলা বিনিময়স্বরূপ তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৯৯)

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখি, কেউ তো হজে গিয়েও সেলফিতে মগ্ন হয়ে পড়ছেন। তা আবার আপলোডও করছেন। সেলফির প্রতি এই অতি আত্মমগ্নতা ধ্বংস করে দিচ্ছে ইখলাস ও তাকওয়া। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদেরকে কেবল এই আদেশই দেওয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, আনুগত্যকে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই জন্য নিবেদিত রেখে নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে। আর এটাই সরল-সঠিক উম্মতের দীন।’ (সুরা বাইয়িনা: ৫)

মনে রাখা উচিত- আল্লাহর কাছে কেবল হৃদয়ের বিশুদ্ধতাই পৌঁছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে না পৌঁছে তাদের (কোরবানির পশুর) গোশত আর না তাদের রক্ত, বরং তাঁর কাছে তোমাদের ‘তাকওয়াই’ পৌঁছে।’ (সুরা হজ: ৩৭)

 

প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা রয়েছে, আমাদের ইবাদত-বন্দেগি যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে রূপান্তরিত না হয়। আমাদের প্রতিটি আমলই হয় যেন শুধু আল্লাহর জন্য, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। কারণ আল্লাহ আমাদের অন্তর দেখেন। অথচ কোরবানির মতো ইবাদতকেও আমরা তাকওয়াবিরোধী কাজ সেলফি তোলার মাধ্যমে নষ্ট করে দিচ্ছি। যা সত্যিই দুঃখজনক।

 

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে উল্লেখ আছে, মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, তিনি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৯৮৯)

 

সংক্ষিপ্ত এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, সেলফি হলো, আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রদর্শনের একটি মাধ্যম। আর ইবাদত হলো সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য। তাই ইবাদতের মধ্যে সেলফির অনুপ্রবেশ ঘটানো মোটেই সমীচীন নয়। এতে আমল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিজীবনেও এর প্রভাব খুবই খারাপ।

 

অতিরিক্ত সেলফিপ্রবণতা নিয়ে গবেষকরা বলছেন, এটি ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) মানসিক ব্যাধির সঙ্গে সেলফি তোলার সম্পর্কটি নিশ্চিত করেছে। (দৈনিক প্রথম আলো: ০৩-০৪-২০১৪)। এই মানসিক সমস্যাটির নাম সেলফিটিস। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা খুব বেশি সেলফি তোলে তারা সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দেয়। সেলফি আক্রান্তদের বেশির ভাগই কর্মজীবনে ও ব্যক্তিজীবনে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং সাধারণদের চেয়ে তাদের কনফিডেন্ট লেভেলও কম থাকে। তারা হতাশা ও মেন্টাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত। যাদের খুব বেশি সেলফি তুলতে ইচ্ছা হয়, তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন। (আলোকিত বাংলাদেশ: ০৮-০৪-২০১৫)

 

সেলফি আসক্তির কারণে কত মানুষের প্রাণ গেছে ইয়ত্তা নেই। চলন্ত ট্রেনের সামনে, বহুতল ভবনের ছাদে, হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে, পাহাড়ের চূড়ায় সেলফি তুলতে গিয়ে বিশ্বে অনেক মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপারেশন ২০১৪ সালকে ‘ইয়ার অব দ্য সেলফি’ ঘোষণা করেছে। তাদের গবেষণা মতে, ২০১৪ সালে প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ গাড়ি চালানো অবস্থায় সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। (সূত্র: https://crashstats. nhtsa.dot. gov/Api /Public/ViewPublication/812260)

 

তাই আসুন, আমরা সেলফির মতো অনর্থক কাজ থেকে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসি। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৫৪ | শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com