| বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার এবং তাদের পক্ষাবলম্বনকারী গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা না বলে সরকার ও কিছু মিডিয়া দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নিপীড়িত মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এজন্য এক সময় সরকারের পাশাপাশি মিডিয়াকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সরকার যৌথবাহিনীর নামে র্যাব-পুলিশকে দিয়ে সারাদেশে নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে। বক্তারা এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণতদন্ত কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারেরও হুশিয়ারি দেন।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ‘বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তৃতায় বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। অথচ ১৫৪টি আসনেই সরকার ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে দেশের পাঁচ কোটি মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন একতরফার তামাশার নির্বাচন সাংবাদিকরা কখনও মেনে নেবে না। আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চালু এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত না করা পর্যন্ত সাংবাদিকরা ঘরে ফিরে যাবে না। চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটিয়ে বন্ধ গণমাধ্যমকে মুক্ত করা হবে।
স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষাবলম্বনকারী গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা না বলে সরকারের দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্য মিডিয়াকে এক সময় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সরকার যৌথবাহিনী দিয়ে সারাদেশে নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। প্রতিটি জেলায় নিহতের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকে না। এজন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসেবে আগামী ২৪ জানুয়ারির পরও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমেও সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিন, এতে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। তা না করে জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সরকারের দুঃশাসন ও অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশ আজ জ্বলছে। ঢাকা অবরুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী তাই ভয়ে স্টেডিয়াম ছেড়ে হোটেল রেডিসনে বিশ্বকাপের ট্রফি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন।
সরকার গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার নীল নকশার মাধ্যমে নির্বাচনের যে পরিকল্পনা করেছিল, বিরোধীদলীয় নেতার আন্দোলনে তা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। এখন ভারত ছাড়া সারাবিশ্ব আজ এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি টিভি টকশো নিয়ন্ত্রণের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে অবিলম্বে মিডিয়া মালিকদের শক্ত অবস্থান তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা না হলে এক সময় তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বন্ধুত্বের দায় মেটাতে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, সরকারের অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার সময় এসেছে। সরকার র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির যৌথবাহিনী দিয়ে সারাদেশে মানুষ হত্যা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ সরকার ’৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে’ ’৯৬ এসে ২০ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এর বিচার একদিন হবেই।
‘বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ আওয়ামী লীগ’ মন্তব্য করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, দেশে যত ধরনের দুর্ভোগ হয়েছে, তার জন্য এই আওয়ামী লীগই দায়ী। বাঁচতে চাইলে সরকারকে তামাশার নির্বাচন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তা না হলে সরকারের পতনের মাধ্যমেই জনগণের বিজয় নিশ্চিত করা হবে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান সরকারকে দমন-পীড়ন বন্ধ করে অবিলম্বে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবি জানান। জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকার জবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। কিন্তু শেখ মুজিবও এভাবে টিকতে পারেনি। শেখ হাসিনাও পারবেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জনগণকে নিয়ে রক্তের হলি খেলা বন্ধ করে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মুহাম্মদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ এমএ নোমান, ডিইউজে দৈনিক আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ডিইউজের নির্বাহী সদস্য শাহজাহান সাজু।
আজ প্রেস ক্লাবে পেশাজীবী সমাবেশ : সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে পেশাজীবীদের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করেছে। এতে সাংবাদিক ছাড়াও চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা অংশ নেবেন।
Posted ০৭:২৬ | বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin