| বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
সারাদিন কড়া রোদ আর সন্ধ্যার পর থেকে ঠাণ্ডা, শীত এসেই গেল। আবহাওয়ার সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ত্বকেরও। এখন থেকেই ত্বকের খুঁটিনাটি যত্ন নিলে সারা শীতে থাকতে পারবেন সতেজ। শীতে ত্বক স্পর্শকাতর হয়ে যায়, সাথে দেখা দেয় নানা রকম সমস্যা যেমন শুষ্কতা, ব্রণ ইত্যাদি। গরমের জন্য যেসব পণ্য এত দিন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো বদলে নিতে হবে ধীরে ধীরে এখন থেকেই।
চলুন জেনে নিই শীতে রূপচর্চার কিছু কথা…
ত্বকের যত্নঃ
শীতে ধুলোবালি অনেক বেড়ে যায় তাই যতটা সম্ভব ত্বক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। শীতকালে ত্বক কখনো একটু অদ্ভুত আচরণ করে, ত্বকে মিশ্র একটা ভাব দেখা দিতে পারে। মুখের টি জোন অর্থাৎ নাক-কপালের অংশ ছাড়া বাকি জায়গা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই ত্বকের ধরন বুঝে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। যদি ত্বকে মিশ্র ভাব দেখা দেয় তবে সাধারণত যে ফেস ওয়াশ গরমকালে ব্যবহার করেছেন সেটাই রাখুন। তবে তা শুধু টি-জোনটুকুর জন্যই। বাকি শুষ্ক জায়গায় সাধারণ ফেস ওয়াশ বা ফোমিং ক্লিনজার দিয়ে ধোবেন। একটু বেশি শুষ্কতা দেখা দিলে ক্রিম ক্লিনজার, ক্লিনজিং মিল্ক অথবা গ্লিসারিন বার ব্যবহার করুন। প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে দেখে নিন আপনার সঙ্গে ক্লিনজিং ওয়াইপস বা ওয়েট টিস্যু আছে কি না। প্রয়োজনে দরকার মত মুখ মুছে নেবেন। এ সময় ত্বক অনেকাংশেই উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। প্রতিদিন মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করতে ভুলবেন না। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যেগুলোতে তেলের পরিমাণ কম, পানির পরিমাণ বেশি। ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ত্বকের প্রয়োজনীয়তা বুঝে নিতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ভারী ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া রোদ থাকে, এ কারণে সানস্ক্রিন লোশন অবশ্যই ব্যবহার করতে ভুলবেন না। কম পক্ষে ৫০+ এসপিএফ আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। ৩/৪ ঘণ্টা পরপর মুখ মুছে নিয়ে নতুন করে লাগাতে হবে। কারণ, সানস্ক্রিন ৩/৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করে না ।
যদি মেকাপ করেন তবে অবশ্যই তা ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। মেকাপ তুলতে বেবী অয়েল বা মেকাপ রিমুভার ব্যবহার করুন এবং শেষে হালকা গরন পানি ও ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো কোন নাইট ক্রিম অথবা এর বদলে আমন্ড অয়েল লাগাতে পারেন। আমন্ড অয়েল ত্বক ময়েশ্চারাইজ যেমন করবে সাথে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানো, বয়সের ভাঁজ কমানো, ব্রণ অথবা দাগ দূর করতেও সাহায্য করবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যেভাবে যত্ন নিতে পারেন তেমন কিছু পদ্ধতিঃ
– কলা পেস্ট করে লাগালে শুষ্ক ত্বকে প্রাণবন্ত ভাব ফিরে আসবে। মধুও শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু পেস্ট করে নিন। অনেক ভালো ফল পাবেন।
– তৈলাক্ত ত্বকে শশার রস চমৎকারভাবে কাজ করবে। শশার রসের সাথে মুলতানি মাটি ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে লাগান। এতে যেমন তেলতেলে ভাব কমবে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসবে। পেঁপে পেস্ট করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য মুখে দিয়ে রাখুন। ত্বকের পোড়া ভাব দূর করবে। গাজর পেস্ট করে ১০ মিনিটের জন্য লাগালে উপকার পাবেন। চন্দন পেস্ট করে লাগান। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ধুয়ে নিন।
– সাধারণ থেকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দুধের ক্রিম অথবা ত্বক দই-এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপের পানি মেশান। মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন, হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন। কলা পেস্ট করে মধু মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– নারকেল তেল কিন্তু ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফেরাতে চমৎকার কার্যকরী। মুখে নারিকেল তেল লাগান। সুতির রুমাল গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো মতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে এবার গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। সব ধরনের ত্বকেই এটি মানিয়ে যাবে।
চুলের যত্নঃ
চুলের ক্ষেত্রেও দেখা যায় শুষ্কতা। অনেকের চুল উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। একটু রুক্ষ, শক্ত ভাব এসে পড়ে চুলে। রইল কিছু টিপস…
– কলার সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে ভালো ভাবে পেস্ট করে লাগাতে পারেন অথবা ওলিভ ওয়েল আর মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ সময় খুশকিও খুব বেশি হয়। চুল সবসময় পরিষ্কার রাখুন। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু লাগাতে পারেন।
– তৈলাক্ত চুলের জন্য, আধাকাপ মেয়োনেজ হালকা গরম করে নিন। মাথায় লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রাখুন। ভালো মতো শ্যাম্পু করুন। চমৎকার সিল্কি ভাব পাবেন। তেল তেল ভাব চলে যাবে। চুল ধোয়ার শেষ পর্যায়ে পানির সঙ্গে দুই-তিন চামচ ভিনেগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। তৈলাক্ত চুলে অতিরিক্ত তেল ভাব চলে যাবে।
হাত-পায়ের যত্নঃ
ধুলোবালিটা এ সময় যেন একটু বেশিই থাকে। এ কারণে নিয়মিত হাত-পায়েরও যত্ন নিতে হবে। খুব সহজে বাসায়ই পেডিকিওর-মেনিকিওর করে নিতে পারেন।
বড় কোন পাত্রে হালকা গরম নিয়ে তাতে সামান্য অলিভ অয়েল এবং দুই চামচ পরিমাণ লবণ মিশিয়ে তাতে হাত-পা ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। পানি পালটে আবার পানি নিয়ে তাতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ১০ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন তারপর ব্রাশ অথবা পিউবিক স্টোন দিয়ে নখের চারপাশ, পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করে নিন। সবশেষে পরিষ্কার পানিতে হাত-পা দুয়ে মুছে নিন। এরপর অবশ্যই লোশন ব্যবহার করবেন। আপনার যদি পা ফাঁটার লক্ষণ দেখা দেয় তবে নিয়মিত পায়ের গোড়ালিতে ভেসলিন বা অলিভ অয়েল মাসাজ করুন।
এরকম সহজ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই শীতের রুক্ষতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে থাকতে পারেন সজিব-সতেজ।
Posted ১৮:১০ | বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin