| বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
বাসস : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চাকরির বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা পাঠ্যক্রম শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয় পড়তে পারেন না। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া বিষয় তারা পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এটি উচ্চ শিক্ষার কোনো মানদণ্ড হতে পারে না। নগরীর বসুন্ধরায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) নিজস্ব ক্যাম্পাসে ইউনিভার্সিটির ১৭তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি আজ একথা বলেন। সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ১৪২৫ জন শিক্ষার্থীকে গ্রাজুয়েশন ও পোস্টগ্রাজুয়েশন ডিগ্রির জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়।
শিক্ষা কার্যক্রমে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ফারজানা আলমগীর, তাবিনদা ইসলাম ও ফারজানা করিম অর্পিতাকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল এবং হানিয়ম মারিয়া ও নাজাত কামরুল ইসলামকে ভিসি গোল্ড মেডেল পদকে ভূষিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রপতি
আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষায় আনন্দ লাভের পাশাপাশি মনোযোগ না থাকলে শিক্ষা স্থায়ী রূপ পাবে না।
শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণ, মানবতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি মমতা এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কৌশল অবশ্য শিক্ষার ভেতর চালিত করতে হবে। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সমাজের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন আমরা এমন ছাত্রছাত্রী দেখতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজেদের গবেষণায় সম্পৃক্ত রাখতে হবে এবং তাদের জানতে হবে তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে কি ধরনের কাজ হচ্ছে।
শিক্ষাকে জাতি গঠনের প্রথম ধাপ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষার অর্থ কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নয়, বরং এর অর্থ এটিও যে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নয়ন এবং সর্বোপরি গভীর দেশপ্রেমের জাগরণ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন যা সৃজনশীল ও আলোকিত মানুষ তৈরি করবে, সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক শিক্ষা নয়, অথবা এ ধরনের শিক্ষা নয় যা কেবল পাঠ্যপুস্তক ও গাইড বই মুখস্থ করা ভিত্তিক।’
আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করেন যে, শিক্ষা হবে আলোকিত বিশ্বে প্রবেশের চাবিকাঠি। আমি আশা করি, অন্ধকার ও কুসংস্কারে আবদ্ধ অবস্থার জন্য শিক্ষা হয়ে উঠবে উন্মুক্ত জানালা। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে এখন এমন শিক্ষা দরকার যা সব বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি সব ধরনের কুসংস্কার, সংকীর্ণতা ও মৌলবাদ নির্মূলের শিক্ষা দেবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০০৫ সালে যেখানে ১১ লাখ ৫ হাজার তা বর্তমানে ২২ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, ‘৭-৮ বছরে উচ্চ শিক্ষার হার দ্বিগুণ করার দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল।’
বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অবস্থান ৪র্থ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জ্ঞান ও যোগ্যতায় যদি বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিশ্বমানে উন্নীত করা যায়, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ দেশপ্রেমিক ও ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষার বিকাশে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এরই মধ্যে অর্ধ-ডজনেরও বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাসের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, সাবেক মার্কিন কংগ্রেসউইম্যান ও সমাবর্তন বক্তা সাবেক ইউএস কংগ্রেসউইম্যান সিনথিয়া এ্যান ম্যাককিনে, এনএসইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী ও এনএসইউ ভিসি ড. আমিন সরকার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
Posted ১৩:১৯ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin