বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাগাতার কর্মসূচিতে সাংবাদিক-পেশাজীবীরা : স্বৈরাচারী সরকারকে সহায়তাকারী মিডিয়াকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না

  |   রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

dhaja press club

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা :  গণমাধ্যমবিরোধী নব্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে লাগাতার আন্দোলন-কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়ে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী বর্তমান স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের সহায়তাকারী হিসেবে যেসব মিডিয়া দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তাদেরও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সরকারের একতরফা নির্বাচন সাংবাদিক সমাজ কখনোই মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করে গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচারী এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা এ হুশিয়ারি দেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। একই দাবিতে আজ রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবেন সাংবাদিকরা। গত বুধবার থেকে সরকারের গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে আসছেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের এ কর্মসূচিতে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী এতে সংহতি প্রকাশ করছেন।
এর আগে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রেস ক্লাবে স্থায়ী মঞ্চ করে স্বৈরাচারবিরোধী লাগাতার আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি টানা ছয় দিন সব ধরনের গণমাধ্যম বন্ধ রেখে এরশাদ সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিলেন এই সাংবাদিকরাই।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, সহকারী মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক সহসভাপতি খায়রুল বাশার, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ এম এ নোমান, প্রচার সম্পাদক আকন আবদুল মান্নান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দিদারুল আলম, ডিইউজের সংগ্রাম ইউনিট প্রধান শহিদুল ইসলাম, নয়াদিগন্তের ইউনিট প্রধান হাসান শরীফ, দিগন্তের ইউনিট প্রধান ইমরান আনসারী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ইউনিট প্রধান আবুল কালাম মানিক, মুক্ত খবরের ইউনিট প্রধান সিকদার আলমগীর, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য প্রত্যয় চৌধুরী, খন্দকার আলমগীর হোসেন, কবি কামার ফরিদ, সিনিয়র সাংবাদিক রকিব উদ্দিন, দিগন্ত টিভির সিনিয়র কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।
সাংবাদিকদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহসভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যুগ্ম মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শিক্ষক নেতা ও দনিয়া কলেজের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, বাহার উদ্দিন বাহার প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল।
সভাপতির বক্তৃতায় রুহুল আমিন গাজী বলেন, বর্তমান সরকারের একতরফা নির্বাচন সাংবাদিক সমাজ কখনোই মানবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ গণমাধ্যম চালু, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষাবলম্বনকারী মিডিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে যেসব মিডিয়া দালালি করছে তারা পার পাবে না। যেসব গণমাধ্যম সরকারের এই অপরাধে সহযোগিতা করছে, তাদেরও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ এসব দালালকে উচিত শিক্ষা দেবে।
শুক্রবার রাতে বিএনপি অফিসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরতা ও সাংবাদিক নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির অফিস এবং চেয়ারপারসন ও মহাসচিবের টেবিল-চেয়ার তছনছ করার মাধ্যমে সরকার গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে। তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে। এরা কখনো সাংবাদিকদের বন্ধু হতে পারে না। গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচারী এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুশিয়ারি দেন বক্তারা। সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ রোববার আবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে তাতে সব পেশাজীবীর অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে কয়েকজন সাংবাদিকের নিশ্চুপ থাকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ঘরে আগুন লেগেছে, এ আগুন থেকে কেউ রেহাই পাবেন না। যারা এখনও সরকারের লেজুরবৃত্তি করছেন তাদের পরিণতি শুভ হবে না।
জোর করে ক্ষমতায় থাকার ফলাফল খুবই ভয়াবহ হবে উল্লেখ করে সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, পুলিশ দিয়ে কোনো স্বৈরচারী সরকারই টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য এ সরকার সবকিছু করছে বলেও অভিযোগ করেন সুপ্রিমকোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী। শুক্রবার রাতে বিএনপি অফিসে সরকারের পেটোয়া বাহিনী যে হামলা চালিয়েছে, তা একাত্তর সালে পাকিস্তানি বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেই আমাদের আন্দোলন শেষ হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি বর্বরতা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার কঠোর সমালোচনা করে শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিন ধরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের অফিস বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক দলের অফিস এভাবে বন্ধ থাকলে দেশে কখনও গণতন্ত্র থাকে না। এ অবস্থায় নাগরিকদের দায়িত্ব— শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চালু, মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও সাগর-রুনির হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা ঘরে ফিরে যাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সাগর-রুনির রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর শেষ রক্ষা হবে না। আওয়ামী লীগের মনোনয়নেও দালাল সাংবাদিকদের শেষ রক্ষা হয়নি।
বিএনপি অফিস তছনছের মাধ্যমে সরকার নিজেই তছনছ হয়েছে উল্লেখ করে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, সরকারের সব উইকেট পড়ে গেছে, এখন শেষ উইকেট শেখ হাসিনাকে ফেলতে হবে। লজ্জা থাকলে প্রধানমন্ত্রী আপনি সরে যান। জনগণ আপনাকে বায়ান তালাক দিয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের গণফারফিউ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশের সড়ক, নৌ ও রেলপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এবার বিমান ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দিতে হবে।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর হামলা ও মিডিয়া বন্ধ চলছে। সর্বশেষ সরকার শুক্রবার রাতে বিএনপির অফিসে তাণ্ডব চালিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে। এর মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের নমুনা স্পষ্ট হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, গণমাধ্যাম বন্ধ, সাংবাদিকদের গ্রেফতারসহ আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়েছে। আমরা আর এসব দেখতে চাই না। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেখতে চাই।
বিএনপির অফিস তছনছের নিন্দা জানিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এর মাধ্যমে সরকার নিজেদের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। সরকারের পতন হবেই। এ সময় তিনি পুলিশ সদস্যদের সরকারের অবৈধ আদেশ না মানার আহ্বান জানান।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান ও তার পদত্যাগ দাবি করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, শুক্রবার রাতে বিএনপির অফিসে যা করা হয়েছে তা কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে তিনি জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় পুলিশি অভিযানের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে যায় সাংবাদিক, আইনজীবী ও পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহসভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, ডিইউজের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যুগ্ম মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পুলিশি তল্লাশিতে ভাঙচুর হওয়া বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের কাছে পুলিশি অভিযানের চিত্র তুলে ধরে তার নিন্দা জানান। এদিকে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশকালে ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ।

আজ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ
এদিকে গণমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে আজ রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিত্সকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী উপস্থিত থাকবেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৩:২৫ | রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

তোমার পথও চেয়ে !!
(3869 বার পঠিত)
নবীজির উম্মত
(2249 বার পঠিত)
তর্জনী
(1179 বার পঠিত)
google5e999233a8e2dbce
(764 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com