| সোমবার, ২০ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
একদিন মনা যাইতে হবে সব ছাড়িয়া, সাড়ে তিন হাত মাটির ভেতর ঘর বাড়ি। এই মাটির ভেতর ঘরবাড়ি তৈরির কারিগর যারা, তারাই আজ “স্বেচ্ছায় কবর শ্রমিক” গোরস্থানই তাদের কাছে অনেক অাপন। মানুষের মৃত্যুর সাথে জড়িত তাদের জীবনের স্বেচ্ছায় শ্রম করাই তাদেরপরিতৃপ্তি। কবর খুঁড়তে গিয়ে অনেক সময় হাড়গোড় এবং মাথার খুলিও ঘাঁটাঘাটি করতে হয় তাদের।
অামরা অাজ রাঙ্গামাটি জেলার, তবলছড়ির বিভিন্ন এলাকার কিছু সেচ্ছায় শ্রমী মানুষের কথা শোনাবো। রাঙ্গামাটি শহরে বিশেষ করে তবলছড়ি ও তার অাশপাশের এলাকায় কেউ মারা গেলে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। কোদাল,খুন্তি নিয়ে ছুটে আসেন। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কবর খুঁড়ার স্বেচ্ছায় সেবক কিছু তরুন,যুবক,প্রবীন। তারা সবাই খেটে খাওয়া দিন মজুর বা ব্যবসায়ী,চালক কিংবা চাকুরীজীবী। তবলছড়ির প্রতিটি এলাকায় এদের বসবাস। তারা বিনা পারিশ্রামিকে কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। স্রর্ষ্টার করুনা আর মানসিক তৃপ্তি মূলত তাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি। এদের কেউ মানুষের উপকারের তাগিদের কারণে, আর কেউ খোদা ভীরু জীবন যাপনের আকর্ষনে, এ স্বেচ্ছায় শ্রমের সঙ্গে জড়িয়েছেন। তারা শহরের ধনী-গরীব সবার কবর স্বেচ্ছায় খুঁড়েন। মৃত্যুর খবর পেলেই কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ছুটে অাসেন এরা। কথা হয় স্বেচ্ছায় কবর শ্রমিক মসজিদ কলোনীর নুর মোহাম্মদের সাথে। গত ১৫/১৬ বছর থেকে তিনি কবর খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন। কথা প্রসঙ্গে নুর মোহাম্মদ জানান, কাঠমিস্ত্রির হেল্পার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর গরীব মানুষের কবর খুঁড়তে মন বিচলিত হত, অন্য কিছুতে মন ঠিকতো না। তাই ২০০০ সাল থেকে কবর খোঁড়ার স্বেচ্ছায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কবর খুঁড়তে গিয়ে প্রায়ই পুরানো লাশের হাড়গোড় পাওয়া যায়। তখন মনের অবস্থা কেমন হয়? হাল্কা একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নুর মোহাম্মদের জবাব- ‘প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগতো, চোঁখে পানি আসতো। এখন আর ভয় কান্দন কিছুই হয়না। তবে কবর খুঁড়ার ডাক পাইলেই নিজের মরার কথা মনে হয়। আর মনে হয় একদিন আমার লাশও পঁচে গলে, হাড়গোড় মাথার খুলি একপাশে রেখে নতুন লাশের সাথে আমারেও আবার কবর দেওয়া হইবে। এখন অার খারাপ লাগেনা।
১৫/১৬ বছরের জীবনে প্রায় ২০০/২৫০ কবর খুঁড়েছেন নুর মোহাম্মদরা।নুর মোহাম্মদ কবর খোঁড়ার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন একবার তবলছড়ির সুলতান ভান্ডারী মারা গিয়েছেন, বলে শুনে অামরা হন্যদন্য হয়ে কবর খোঁড়ার সরঞ্জাম নিয়ে রওনা দিই। কিন্তু কবর খুঁড়তে যাওয়ার মাঝ পথে শুনতে পাই উনি অসুস্থ্য মারা যাননি। ভুল তথ্য পেয়ে কবর খোঁড়ার নেশার টানে এভাবেই ছুটে চলে এরা। মাইকিং,মৃত মরদেহের প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে দেওয়া সবই স্বেচ্ছায় শ্রমে করেন। কথা হয় স্বেচ্ছায় কবর শ্রমিক অাকতার হোসেনের সাথে। একই পেশায় জড়িত মহসিন ও লিটন। এদের অনুভুতি, ও অনেকটা নুর মোহাম্মদের মতো। অাকতার হোসেন বলেন প্রথম আমরা সর্বপ্রথম, সিরাজ মিস্ত্রীর,কোদাল,খন্তা,কড়াই এবং বিভিন্ন জন থেকে ধার করা সামগ্রী নিয়ে শুরু করি।তারপর আমাদের জমানো টাকা দিয়ে কিনে নেই বিভিন্ন সামগ্রী। পরে অনেকই খুশি মনে কিনে দেয় অন্যান্য সামগ্রী। আমরা কবরস্থানে বৈদ্যুতিক খাম্বায় একটি করে লাইট ব্যবহার করার জন্য প্লাগ চেয়েছিলাম সেই পৌর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সময় থেকে এরপর অারো দুজন মেয়র হয়েছেন কিন্ত আমাদের দাবী টি পূরন হয়নি অাজো। জানাজার মাইকিং থেকে শুরু করে সব অামরা ভালোবেসে করি। সব চাইতে বড় বিষয় এখানে লিডারশীপ, নেতাগিরি,হুংকার,ধমক নেই আছে ভালোবাসা, স্নেহ, শ্রদ্ধা, মন ভালো রাখার জন্য হাসি খুশি থাকা,কেউ বিনিময়ে গাড়ি ভাড়া,নাস্তা, টাকা কিছু চায়না চেয়ে আসছি ভালোবাসা অার দোয়া। রাঙ্গামাটি তবলছড়িতে এই কবর স্বেচ্ছায় শ্রমিকের কাজ যারা করেন তারা হলেন মোঃআক্তার হোসেন, ব্যবসায়ী, জয়নাল আবেদিন, বাবুর্চি, আগার খাঁ,বাজারে শ্রমিকের কাজ করে, জাকির হোসেন, ড্রাইভার, নুর মোহাম্মদ,ফার্নিচার ব্যবসা।
নুরু আলম,চাকুরীজীবী,এনাম হোসেন, ড্রাইভার ,ইয়াছিন, ড্রাইভার,নাজমুল মৃত, স্বপন ,মহসিন, ফার্নিচার মিস্ত্রী, জসিম, ড্রাইভার, লিটন, ব্যবসায়ী,সুমন, মান্নান ব্যবসায়ী,জয়নাল, ফার্নিচার মিস্ত্রী, দিদার, ব্যবসায়ী, আরিফ, ব্যবসায়ী, রকিব, ব্যবসায়ী, দীন ইসলাম, শ্রমিক,শহিদুল ইসলাম,ফলের দোকানদার, কালু, মোবাইল মেকানিক,আবুল বশর, ছাত্র,বধন, মির হোসেন (বাবু), ড্রাইভার, ঝন্টু ড্রাইভার, সালাউদ্দিন,মনির হোসেন, মো: হানিফ, ড্রাইভার, শুক্কুর। নাম না যানা অারো অনেকে। এসব ভাইদের প্রতি আমার সহস্র সালাম। তাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
Posted ০৯:২২ | সোমবার, ২০ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain