নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নজিরবিহীন ভাষায় ‘আক্রমণ’ করেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে- পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। কারণ তাকে তার স্তাবকরা যা শোনান তিনি তাই বিশ্বাস করেন এবং টিপ্পনি করেন। গত ৩১ জানুয়ারি তিনি বোলপুরের রাঙাবিতানে বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক, পাঁচজন ছাত্র ও একজন গবেষণারতা ছাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বেশ কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন জনসমক্ষে। …মুখ্য়মন্ত্রী একটু বাড়াবাড়ি করলেন না কি? অবশ্য় তিনি যদি নিজেকে আদালতের ওপরে ভাবেন তবে অবশ্য় বলার কিছু নেই।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতীতে দেওয়াল তোলার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। ওনার নিরাপত্তার জন্য বোলপুর শহর ঘিরে ফেলা হলো। ওনার বাসস্থান হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কি দেওয়াল নেই। এই দেওয়াল তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অন্তত তিনযুগ আগে। তখন তো তথাকথিত আশ্রমিকরা প্রতিবাদ করেননি।… মুখ্য়মন্ত্রীর স্নেহধন্য পার্টি সদস্যরা যখন ২০২০ সালের অগস্ট মাসে ঐতিহ্যমন্ডিত তোরণ ভাঙল তখন আশ্রমিকরা তো প্রতিবাদ করেননি।…
‘মাননীয়াকে অনুরোধ করব কান দিয়ে না দেখে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী আর উপাচার্য গারদের ভেতরে কী করে হলো? …আপনার প্রিয় শিষ্য যাকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারেন না তিনিও জেলে। কবে বেরোবেন কেউ জানেন না।…যদি স্তাবক পরিবৃত্ত হয়ে থাকতে ভালোবাসেন তাহলে সামনে আরও বিপদের সম্মুখীন হবেন।’
এরপরে লেখা হয়েছে, আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীয় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, স্তাবকরা সেই কথাটাই বলেন যেটা তিনি শুনতে ভালোবাসেন। তিনি কান দিয়ে দেখেন।
তৃণমূলের একজন সাংসদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি (বিশ্বভারতীর উপাচার্য) কদর্য ভাষায় কথা বলেছেন। তার সঙ্গে বিজেপি নেতার মিল পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির দলদাসের মতো শোনাচ্ছে।
আর একজন বিজেপি নেতা বলছেন, যিনি যে ভাষায় বুঝতে পারেন তাঁকে সেই ভাষাতেই বলা দরকার।
এদিকে বিশ্বভারতীয় পরিস্থিতি নিয়ে মমতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিতে পারেন।
এরআগে অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি ইস্যুতে ‘শেষ দেখে ছাড়ব’ বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জমি নিয়ে বিতর্ক চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা দখল করে রেখেছেন। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগ এই প্রথম নয়। বছর দুয়েক আগেও একই অভিযোগে সরব হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
আর অমর্ত্য সেনের দাবি তাকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। অমর্ত্য সেন লাগাতার বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির কাজের সমালোচনা করেছেন এবং এখনও করছেন। সরকারের সমালোচনার কারণে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অমর্ত্য সেনের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপি তাকে আক্রমণ করছে। কখনও তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার কখনো অনুষ্ঠানের জন্য মিলনায়তন বরাদ্দ না দিয়ে তাকে বা তার সংস্থাকে হেনস্থা করা হচ্ছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।
Posted ০৮:১৬ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain