| শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | প্রিন্ট
ওবায়দুল কবির নকিব
দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাভোগ নিয়ে দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বেও জোর প্রতিবাদ চলছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে যেমন সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সাধারণ জনগণ, তেমনি প্রবাসেও বিবেকবান মানুষ মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে উচ্চকণ্ঠ। তারা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, মানববন্ধন করে মাহমুদুর রহমানের প্রতি সরকারের অমানবিক আচরণের নিন্দা জানাচ্ছেন। সামাজিক-রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের যেন কোনো বিকার নেই।
আটক হওয়ার তিন দিনের মধ্যে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এদেশের সংবাদপত্রের প্রথিতযশা ২৮ জন সম্পাদক। এছাড়া প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী-কবি- সাহিত্যিকরাও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা তাদের বিবৃতিতে মাহমুদুর রহমানের আটকাদেশকে এদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করার নামান্তর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মাহমুদুর রহমানকে আটক করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, বন্ধ করে দেয়া হয় তার সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ ও এর ছাপাখানা। মাঠের আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আমার দেশ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়, ছাপাখানা খুলে দেয়া হয়। এই আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর আন্তরিক সমর্থন আমার দেশ পেয়েছে। এজন্য আমার দেশ পরিবার সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
পত্রিকা ও ছাপাখানা ফিরে পাওয়া গেলেও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এখনও কারান্তরালে। আদালত অবমাননার অভিযোগে তিনি কারাভোগ করছেন। কিন্তু কী তার অপরাধ, কেনইবা তিনি কারাভোগ করছেন তা যেমন তিনি জানেন না, তেমনি জানেন না দেশের জনগণও। তার কারাভোগ প্রায় শেষ পর্যায়ে; কিন্তু এই অভিযোগের ব্যাপারে যে রায় দেয়া হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ রূপ আজও পাওয়া যায়নি।
মাহমুদুর রহমান আর অনেকের মতো ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার দায় থেকে মুক্তি পেতে পারতেন। কিন্তু তিনি সত্যের কথক। যে সত্যকে তুলে ধরার জন্য পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়ে সেই সত্যের অবমাননা করতে চাননি। সেজন্য তিনি ক্ষমা না চেয়ে আদালতে মুখোমুখি হয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব চারশ’ বছর আগে বিশিষ্ট দার্শনিক সক্রেটিসের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছিল। হেমলক বিষপান করিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়ার পর সক্রেটিসকে আটক রাখা হয়েছিল যে কারাগাারে, সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তার সুহৃদরা। কিন্তু সক্রেটিস পালিয়ে যাননি। তিনি তার সুহৃদদের বলেছিলেন, আমি যদি আজ পালিয়ে যাই, তাহলে আমার অপরাধ স্বীকার করা হয়। তেমনি মাহমুদু রহমান ক্ষমা না চেয়ে বরং তার কথিত আদালত অবমাননার অভিযোগের গালেই জোরে এক চপেটাঘাত বসিয়ে দিয়েছেন।
লেখক : মো:ওবায়দুল কবীর নকীব (খোকন)
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
ব্যারিষ্টার -এট-ল (অধ্যয়নরত),
লন্ডন ইউনিভার্সিটি,
ইংল্যান্ড।
গত ২৬ই জানুয়ারী দৈনিক আমার দেশ,১ম পৃষ্টায় প্রকাশিত
Posted ১০:২২ | শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin