| শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | প্রিন্ট
অধ্যাপক আবদুল গফুর
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ঊনষাট বছরে আমাদের প্রত্যাশিত অর্জন হয়নি। তবে অর্জন একেবারে যে হয়নি তা নয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধানে বাংলাকে আমাদের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে। ভাষা আন্দোলনের পরিণত ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। অর্থাত্ বাংলাদেশও ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অর্জন। ভাষা আন্দোলনের সময় স্বায়ত্তশাসনের যে দাবি ওঠে, যে স্বাধিকার চেতনার সৃষ্টি হয় তখন, এরই পরিণতিতে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশকে দেখতে পাই। আজ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এসব তো ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ জাতির অর্জন।
আন্দোলনের ঊনষাট বছর পর আমাদের ব্যর্থতাও আছে। একুশের চেতনা ছিল যে কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। সেই চেতনা আমরা সমুন্নত রাখতে পারিনি। রাখতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সাম্রাজ্যবাদ, অপশক্তি, আধিপত্যবাদীর কাছে সবসময় মাথা নত করে চলেছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। একুশের চেতনা সমুন্নত রাখতে না পারার কারণ আমাদের ভেতরকার দুর্বলতা। স্বাধীনতার পর আমাদের মনোভাব ছিল এরকম যে, আমরা সব পেয়ে গেছি। আমাদের আর সংগ্রাম লাগবে না। বাইরের প্রতিপক্ষকে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার দরকার নেই। প্রতিরোধ করার বদলে আমরা নিজেরা সবসময় লড়াই করে চলেছি। তাতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে।
ভাষাসৈনিকদের মূল্যায়ন এদেশে হয়েছে। সব সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মূল্যায়ন করেছে। একুশে পদক পেয়েছেন অনেকে। সেদিক থেকে মূল্যায়ন হচ্ছে। আমি মনে করি, ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করার বদলে যে কারণে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, সেদিকে নজর দেয়া সব সরকারের উচিত ছিল।
একুশের কাছে আমাদের এখনও প্রত্যাশা আছে। একুশের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। এ শিক্ষা আমরা গ্রহণ করছি না। নতুন করে এ শিক্ষা গ্রহণ করব, এবারের একুশে এটাই আমার প্রত্যাশা।
লেখক : ভাষাসৈনিক, প্রবীণ শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট
অনুলিখন : হাসান শান্তনু
Posted ২১:৩৩ | শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin