| বৃহস্পতিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিকাল তিনটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আনুশকা রায় জানায়, আমাদের দাবি প্রায় সবগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের ছয় দফার মধ্যে ১ ও ৫ দফা তদন্তের বিষয় স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। এগুলো মন্ত্রণালয় ও সরকারের ব্যাপার, তদন্তের ব্যাপার। তবে ২, ৩, ৪ ও ৬ দফা স্কুল কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে। এজন্য সময় দিতে হবে।
এই শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। কাল থেকে আমরা পরীক্ষায় অংশ নেবো।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আনুশকা রায় জানায়, আমাদের কোনও নির্দোষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যাতে এই ঘটনায় হেনস্থা না হয় আমরা সেটা চাই। ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষীরা যাতে বিচারের মুখোমুখি হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে ৬টি দাবি করেছিল, সেগুলো হচ্ছে:
(১) অধ্যক্ষের পদত্যাগ এবং ৩০৫ ও ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(২) প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে তাদের নিজস্ব আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আলাদা যত্ন নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) কোনোভাবেই কোনও শিক্ষক, শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ এবং অত্যাচার প্রয়োগ করতে পারবে না।
(৪) কথায়-কথায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের হুমকি বন্ধ করতে হবে।
(৫) বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মরত সকলের মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মানসিক পরামর্শদাতা থাকতে হবে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরামর্শদাতার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে।
(৬) গভর্নিং বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে এবং অরিত্রীর মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য অধ্যক্ষ ও বিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশ্যে ক্ষমতা চাইতে হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার (৫ ডিসেম্বর) গভর্নিং বডির সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী শনিবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে পূর্বনির্ধারিত রুটিনে পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থগিত হওয়া বুধবারের (৫ ডিসেম্বর) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর)। আর বৃহস্পতিবারের (৬ ডিসেম্বর) পরীক্ষা হবে মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর)।
এর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দেওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদাউসসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদাউস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার এবং শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে। তারা তিনজনই সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি।
পরে বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে ঢাকা মুখ্য নগর হাকিম আদালতে নেওয়া হলে হাকিম আবু সাঈদ শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুনানিতে শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে আদালতে হাজির করে আটক রাখার আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। হাসনা হেনার পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসনা হেনা পুলিশকে জানিয়েছে, আমার কাজ হলো কোনো মেয়ে যদি ঝামেলা করে তাহলে তার বাবা-মাকে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে দাঁড় করানো। এ ক্ষেত্রে মোবাইল পাওয়ায় আমি তাই করেছিলাম। এ ছাড়া আমার কোনো দায় নেই। অরিত্রির বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। অধ্যক্ষ আমাকে যা বলেছেন আমি তাই করেছি।
এর আগে বুধবার রাত ১১টার দিকে উত্তরা ইন হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে ভিকারুননিসার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আখতারকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিবির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রাণ হারায় অরিত্রি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণিশিক্ষিক হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। সেই মামলার তিন নম্বর আসামি হাসনা হেনা।
Posted ২১:৪৯ | বৃহস্পতিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain