সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে শকুন কমে যাওয়া যেভাবে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | প্রিন্ট

ভারতে শকুন কমে যাওয়া যেভাবে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ

ভারতে যেখানে একসময় ৫০ মিলিয়ন শকুন ছিল, সেখানে ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি এ সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ভারতে তিন প্রজাতির শকুন অর্থাৎ সাদা মাথার শকুন ৯৮ শতাংশ, লাল-মাথার শকুন ৯১ শতাংশ ও ভারতীয় শকুনের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

 

আর এর কারণ হলো গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক নামে ব্যথানাশক একটি ওষুধ। সস্তা এ ওষুধটি শকুনের জন্য খুবই মারাত্মক ছিল। যেসব গবাদিপশুকে এ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, সেসব পশুর মৃতদেহ খেয়ে বহু শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে যায় এবং এরা মারা যায়।

 

স্টেট অব ইন্ডিয়া’স এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে গবাদি পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর থেকে কিছু এলাকায় শকুনের মৃত্যুও কমতে শুরু করে। তবে শকুনের তিনটি প্রজাতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের সংখ্যা ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

 

তবে এখানেই শেষ নয়। গবেষকরা বলছেন, শকুন কমে যাওয়ার ফলে মানুষের মৃত্যুর হারও বেড়েছে।

আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রকৃতির ‌‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ এসব পাখি কমে যাওয়ায় খুব সহজেই মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটছে। আর এসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে পাঁচ বছরে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

 

গবেষণার সহলেখক ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’স হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক আইয়াল ফ্র্যাঙ্ক বলেছেন, ‘আমাদের পরিবেশ থেকে ব্যাকটেরিয়া ও রোগ-জীবাণুযুক্ত মৃত প্রাণীগুলো অপসারণে শকুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এসব পাখি প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিবেচিত। এসব পাখি না থাকলে অসুখ ছড়াতে পারে।

 

ফ্র্যাঙ্ক ও তার সহলেখক অনন্ত সুদর্শন গবেষণায় ভারতের বিভিন্ন জেলায় মানুষের মৃত্যুর হারের দিকে নজর দেন। তারা এসব জেলায় শকুনের সংখ্যা কমার আগে ও পরে মানুষের মৃত্যুর হারের তুলনা করেন। তারা দেখতে পান, যেসব জেলায় শকুনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে, সেসব জেলায় মানুষের মৃত্যুর হারও আগের তুলনায় চার শতাংশ বেড়েছে।

 

গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেন, যেসব শহর এলাকায় মৃত গবাদিপশু ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হতো, সেসব এলাকায় মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।

 

গবেষকদের অনুমান-শকুন কমে যাওয়ায় ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর এ মৃত্যুগুলো হয়েছিল রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার কারণে।

উদাহরণস্বরূপ, শকুন কমে যাওয়ায় পথের কুকুরগুলো ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মৃত পশুগুলো খেত। কিন্তু তারা শকুনের মতো পরিবেশকে জীবাণুমুক্ত করতে পারত না। এসব কুকুর থেকে ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেই পানি থেকে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শরীরেও।

 

অনন্ত সুদর্শন বলেন, ‘মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, শকুনদের বাসস্থান হারানো, বন্যপ্রাণীর ব্যবসা, জলবায়ু পরিবর্তন এসবেরও অনেক প্রভাব রয়েছে পাখিগুলোর ওপর, এমনকি আমাদের নিজেদের ওপরেও।’

 সূত্র : বিবিসি 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৫১ | শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com